‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ!

‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ডেপুটি গভর্নর নির্বাচনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি বরাবর পাঠানো চিঠিতে এসব কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত করে শাস্তির আবেদন জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে’ এসংক্রান্ত একটি চিঠি সার্চ কমিটির কাছে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে দেশের ‘সম্পদ লুটেরাদের’ প্রধান সহযোগী ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

এ ছাড়া নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক রিজার্ভ চুরি হওয়ার তালিকাভুক্ত আসামি। তিনি দুর্নীতির অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
চিঠিতে আরো বলা হয়, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের পরিকল্পনা ও ব্যাংকের নীতি পলিসির তোয়াক্কা না করে মানি লন্ডারিংয়ে উৎসাহ দিয়েছেন মেজবাউল হক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান কোনো রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির পরামর্শে রিজার্ভ চুরি হওয়ার সংবাদ এক মাসের মতো গোপন রাখেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকের পরামর্শে ও মাধ্যমে চুরিসংশ্লিষ্ট আইসিটি আলামত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সেই রাকেশ আস্তানাকেই আইসিটি সিকিউরিটি এক্সপার্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এক মাস ধরে সব আলামত নষ্ট করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকিং খাতের আইসিটি ব্যবসার জন্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক তাঁর ঘনিষ্ঠজন দেবদুলাল রায় ও মেজবাউল হকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু ফাংশনালিটি বিশেষ করে পেমেন্ট সিস্টেমস ও সিআইবি বাণিজ্যিকীকরণের উদ্যোগ নেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংঘর্ষপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এসব কাজ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেনদেন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুইচ স্থাপনের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, দেবদুলাল রায় ও মেজবাউল হকের যোগসাজশে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকৃত খরচের চেয়ে ২০ গুণ অর্থ ব্যয় করে বিনিময় প্রকল্প শুরু করা হয়।

প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্ধেক লভ্যাংশ শেয়ারের জন্য একটি চুক্তি করা হয়।
ভারতের টাইম ইন্ডিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের মালিকানাধীন টমসেল নামের প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ মালিকানায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভারতের যেকোনো এআইএম থেকে টাকা উত্তোলনের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল পেমেন্টস করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ডাটা সেন্টারের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের কাজ চলমান আছে। জয়ের ব্যাবসায়িক ক্ষেত্র বৃদ্ধির জন্য দেবদুলাল রায় ও মেজবাউল হকের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমের (এনআইএসবি, ইএফটি, ব্যাচ) সব ফাংশন বেসরকারীকরণের জন্যে এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি অভ্যন্তরীণভাবে প্রায় শেষ করে রাখা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে দাপ্তরিক কোনো সার্কুলার হয়নি।
নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) দেবদুলাল রায়

চিঠিতে বলা হয়, দেবদুলাল ও আটক হওয়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক একই স্কুলের ছাত্র হওয়ায় পলক দেবদুলালকে ও মেজবাউল হককে জয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকিং সেক্টরের আইসিটিকে নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ক্রয়কাজে সিন্ডিকেট ফরম করেন। এ ছাড়া সদ্যোবিদায়ি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, দেবদুলাল ও মেজবাউল হক মিলে পেমেন্ট সিস্টেমস ও আইসিটি বিভাগের সব ক্রয়সংক্রান্ত কাজে বিভিন্ন আইসিটি পণ্যের উৎপাদক, ডিস্ট্রিবিউটর ও সরবরাহকারী মিলে এক সিন্ডিকেট করে এক টাকার পণ্য ১০০ টাকায় ক্রয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাধ্য করায়।

চিঠিতে বলা হয়, দেবদুলাল রায় ও মেজবাউল হকের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটা সেন্টার বেসরকারি খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব আইসিটি সিস্টেমস কেনাকাটা দেবদুলালের হাতে কুক্ষিগত হয়ে আছে। প্রকিউরমেন্ট সেকশনটি তাঁর সহযোগী জনবল দিয়ে সাজিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেকশনের ওপর থেকে নিচের সব কর্মকর্তার তালিকায় আছে আইসিআই বিভাগের দুজন পরিচালক (তৃতীয় গ্রেড)। তাঁরা হলেন চন্দন সাহা ও পঙ্কজ কুমার মল্লিক। অতিরিক্ত পরিচালকদের (চতুর্থ গ্রেড) মধ্যে বিষ্ণু পদ বিশ্বাস, যুগ্ম পরিচালক (পঞ্চম গ্রেড) প্রকাশ চন্দ্র মণ্ডল, উপপরিচালক (ষষ্ঠ গ্রেড) মিথুন সরকারের সমন্বয়ে সাজিয়ে নিয়ে অপকর্ম করা হচ্ছে।

চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংক খাতের ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সিআইবি। সিআইবিকে ব্যবসা ও দুর্নীতি করার অভিলাষে বেসরকারি খাতে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে অযাচিতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে সার্কুলার করা হয়েছে। দেবদুলাল সিআইবি সফটওয়্যারে সব কন্ট্রোল নিয়ে কর্মকর্তাদের কর্মহীন করে রেখেছেন। ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ তথ্য আপডেট করার এবং সিস্টেমে তা নয়ছয় করার কন্ট্রোল দেবদুলালের হাতে নিয়েছেন।

চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে চলমান সিবিএস ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাটা কনসাল্টিং সার্ভিসেস (আইসিএস) থেকে কেনা। মেজবাউল হক ও দেবদুলাল রায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এই কাজ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *