দেশে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা, ৪ কারণ জানালেন আবহাওয়াবিদ পলাশ!

দেশে বন্যার মূলত চারটি প্রাথমিক কারণ উল্লেখ করেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।

দেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ আগস্ট থেকে টানা তিন দিন দেশের পূর্বাঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ৫৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে বাংলাদেশের আটটি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। অনেকের মতে, হঠাৎ অতিভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢল, জলাশয় ভরাট এবং পানি সরে যাওয়ার জলপথ সংকুচিত হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি খুব দ্রুত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে সাধারণত পূর্বাঞ্চলে এত ভারী বৃষ্টি হয় না। বিশেষ করে মাসের শেষের দিকে টানা বৃষ্টি হলেও তা মূলত দেশের উপকূলীয় এলাকা থেকে মধ্যাঞ্চলজুড়ে থাকে। আগস্টে এর আগেও ফেনী ও কুমিল্লায় অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু তা এক–দুই দিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে গত এক মাসে থেমে থেমে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ জেলায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও ভারী বৃষ্টি ঝরেছে।

এ প্রসঙ্গে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ সংবাদমাধ্যমকে বাংলাদেশে চলমান বন্যার জন্য মূলত চারটি প্রাথমিক কারণ উল্লেখ করেন।

এগুলোর মধ্যে প্রথমত হচ্ছে, মৌসুমী লঘুচাপটি বাংলাদেশের উপর স্থায়ী হয়ে আছে। বুধবার (২১ আগস্ট) বিকালেও এ লঘুচাপটি চট্টগ্রামের অংশে অবস্থান করছিল যা পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছিল না। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানা গেছে।

দ্বিতীয়ত, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে খুবই শক্তিশালীভাবে ম্যাডেন-জুলিয়ান অসিলেশন (এমজেও) অবস্থান করছে। এর ফলে সাগরে নিয়মিত গরম ও আর্দ্র বাতাস তৈরি হচ্ছে, যা উপকূলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।

তৃতীয়ত, মধ্য এশিয়ার উপরিভাগে এখন ‘জেট স্ট্রিম’ অবস্থান করছে। এর ফলে ভারতসহ বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

চতুর্থত, বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়ার পিছনে ভারতের বাঁধ খুলে দেয়াটা অন্যতম কারণ। ভারতীয় অংশেও ভারী এবং টানা বৃষ্টিপাতের কারণে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বিপৎসীমায় পৌঁছে যাওয়ায় উজানের এই দেশটিও বন্যার কবলে পড়েছে। প্রতি বছর ভারত বন্যার আক্রান্ত হলেই বাঁধ খুলে দেয়। এ বছরও তারা কোথাও কোথাও বাঁধ খুলে দিয়েছে এবং কিছু জায়গায় অতিরিক্ত পানির কারণে বাঁধের গেটগুলো ভেঙে গেছে।

মোস্তফা কামাল পলাশ ব্যাখ্যা করেছেন, এ তিনটি কারণ একই সঙ্গে ঘটলে তখন ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এবং এর ফলে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ দেশে ২০১৭ সালের জুন মাসে এই তিনটি কারণ একই সঙ্গে ঘটেছিল এবং এর কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম। যার ফলে সেই বছর চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষ মারা যায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পলাশ সতর্ক করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০০-৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আগামী শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে এই বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ সাম্প্রতিক বন্যার জন্য দু’দিন আগে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ ঘণীভূত হওয়াকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দুই দিন আগে সুস্পষ্ট লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছিল। লঘুচাপের ডান দিকে অর্থাৎ, সিলেট ও চট্টগ্রামে অস্বাভাবিকভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, অন্যদিকে উষ্ণ, মৌসুমি বায়ুর কারণে অন্যান্য এলাকায় বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এমনটা সাধারণত ঘটে না।’

এদিকে, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আরও খারাপ বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তারা দেশের আরও জেলা বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *