৫ম দিনের খেলায় পাকিস্তানকে কোন ধরনের রুম দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। এদিকে পাকিস্তান টানা উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে ছিল। পাকিস্তানের শেষ ভরসা মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আর পাকিস্তানের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। টেলএন্ডার মোহাম্মদ আলিকে ফেরত পাঠিয়ে স্বাগতিক দলের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন মিরাজ।
এক ইনিংসে চার উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সাকিব নেন ৩টি উইকেট। সাকিব-মিরাজের বোলিং তোপে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানে থেমে যায় শান মাসুদের দল। স্বাগতিক দল মাত্র ২৯ রানের লিড নিতে সক্ষম হয়।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১ম টেস্ট জিততে বাংলাদেশের দরকার ছিল মাত্র ৩০ রান। এখনও একাধিক সেশন বাকি আছে।এদিকে, প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানের জবাবে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে বাংলাদেশ ৫৬৫ রানে থামে। প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও ঢেউ তোলে টিম টাইগাররা।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই স্বাগতিক দলকে বিপদে ফেলে দেন শরিফুল ইসলাম। চতুর্থ দিনের বিকেলে নিজের তৃতীয় ওভারে সাফল্য এনে দেন তিনি। শরিফুল অসাধারণ বোলিং করেন এবং ব্যক্তিগত ১ রানে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে স্যাম আইয়ুবকে ফেরত পাঠান।
আজ শেষ দিনের দ্বিতীয় ওভারে সাফল্য এনে দেন হাসান মাহমুদ। বলটি পাকিস্তানি অধিনায়কের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে লিটন দাসের গ্লাভসে গিয়ে শেষ হয়। আম্পায়ার জোরালো অনুরোধে সাড়া না দিলে বাংলাদেশ রিভিউতে সফল হয়। তবে পরের ওভারে বাবর আজমের বলে শরিফুলের বলে মাসুদের হাতে সহজ ক্যাচ দেন লিটন।
প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও শূন্য রানে ফিরতে পারেন তিনি। লিটনের হাতে প্রাণ পেয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাবর। রানার নাহিদের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় বাবরকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলের উপর কভার ড্রাইভ করেন সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক। ভালো খেলতে পারেননি। বল ব্যাটের কানায় লেগে লেগ স্টাম্পে লেগে যায়। বাবর ৫০ বলে করেন ২২ রান।
বাবর আজমকে আউট করে সাকিব পাকিস্তানের জুটি ভাঙার পর পরের ওভারে সৌদ শাকিলকে শূন্য রানে আউট করেন। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের ইনিংস খেলেন শাকিল। পাকিস্তানের পরের উইকেটও নেন সাকিব। বড় শট খেলতে গিয়ে নিজের উইকেট তুলে দেন আবদুল্লাহ শফিক। এর মধ্য দিয়ে রেকর্ডের পাতায় নাম তুলেছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন তার। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার উইকেট সংখ্যা ৭০৬।
নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে পেছনে ফেলেছেন সাকিব। ৩০৫ ওডিআই, ৩৬২ টেস্ট এবং ৩৮ টি-টোয়েন্টি উইকেট সহ ভেট্টরির একটি উজ্জ্বল ক্যারিয়ার ছিল। বাংলাদেশ অলরাউন্ডার আব্দুল্লাহ শফিকের উইকেট নেন এবং রাওয়ালপিন্ডিতে কিউআই স্পিনারকে পিছনে ফেলে দেন।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে মেহেদি হাসান মিরাজ আঘাত হানেন পাকিস্তানি শিবিরে। সাকিবের টানা ২ উইকেটে পাকিস্তান আগে থেকেই ব্যাকফুটে। স্বাগতিক দলকে আরও বিপদে ফেলে দেন মিরাজ। আগা সালমানকে স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ দিয়ে ফেরত পাঠান সাদমান ইসলাম।
বিরতি থেকে ফিরে এসে, মিরাজ বিকেলের বিরতির আগে যেখানে ছেড়েছিল সেখানেই তুলে নেয়। ঠিকমতো ব্যাট করতে পারেননি শাহীন আফ্রিদি। বল লেগেছিল প্যাডে। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে আসেন শাহীন। মিরাজের পর আবারও সাকিবের উইকেটের উদযাপন। হাওয়ায় ভাসমান বলকে আঘাত করে মিডউইকেটে মুশফিকের হাতে সহজ ক্যাচ দেন তিনি।
বাকি কাজ একাই শেষ করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একে একে ফেরান মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মোহাম্মদ আলী। সাকিব ও মিরাজ মিলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। বাকি তিনটি উইকেট নেন যথাক্রমে শরিফুল, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।
পাকিস্তান (প্রথম ইনিংস)- ৪৪৮/৬ (১১৩ ওভার) (রিজওয়ান ১৭১*, সাইম ৫৬, শাকিল ১৪১, সালমান ১৯, আফ্রিদি ২৯*; শরিফুল ২/৭৭, হাসান ২/৭০)
পাকিস্তান (২য় ইনিংস)- ১৪৬/১০ (১৮ ওভার) (আইয়ুব ১, শফিক ১৬*, শান মাসুদ ৯, বাবর আজম ৭, রিজওয়ান ৪০* খুররাম ০*) পাকিস্তান ২৯ রানের লিড।
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৫৬৫/১০ (১৫৬ ওভার) (সাদমান ৯৩, মুমিনুল ৫০, জাকির ১২, শান্ত ১৬, সাকিব ১৫, লিটন ৫৬, মুশফিকুর ১৯১, মিরাজ ৭৭ হাসান ০, শরিফুল ২২, নাহিদ ১*)
বাংলাদেশ (২য় ইনিংস)- ৩০/০ ( ওভার) (সাদমান ১*, জাকির ৭*)টার্গেটঃ ৩০ রান
ফলাফলঃ বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়লাভ করে।
ম্যান অব দ্যা ম্যাচঃ মুশফিকুর রহিম (১৯১, ১ ক্যাচ)
Leave a Reply