ত্রাণ দিতে গিয়ে সেলফি পোস্ট, সমালোচনার জবাব দিলেন খায়রুল বাসার!

ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে। ফেন্রী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘড়-বাড়ি ও বসতভিটা পর্যন্ত ভেসে গেছে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া বন্যার্তরা জায়গা করে নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।

এসব বানভাসিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ সরকারি বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন তাদের সেরাটা দিয়ে উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ সহায়তা করে যাচ্ছে। তবে এর বাইরে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগেও এগিয়ে এসেছেন। সে তালিকায় সাধারণ মানুষের মতোই রয়েছেন সংগীত ও শোবিজ তারকারা।

তাদেরই একজন ছোটপর্দার আলোচিত অভিনেতা খায়রুল বাসার। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুর। সেখানে বিভিন্নভাবে বানভাসিদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। তবে এরই মধ্যে একটি সেলফি ঘিরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন এ অভিনেতা।

বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে একটি সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে পোস্ট করেন খায়রুল বাসার। যা নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন নেটিজেনরা। সমালোচনা করে নানা ধরনের কটু কথা বলছেন। আর সেসব সমালোচনা দৃষ্টি এড়ায়নি অভিনেতার। তাইতো ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাসে জানালেন তিনি।

সম্প্রতি এক স্ট্যাটাসে খায়রুল বাসার লিখেছেন, ‘কেউ বলেছে পিকনিক, কেউ বলেছে বন্যা ট্যুর, কেউ বলেছে লোক দেখানো, কেউ বলেছে একজন বাঁচাতে ১৭ জন, কেউ বলেছে বাচ্চা ছেলেটাকে নিয়ে যাওয়া হলো কেন, কেউ বলেছে মেয়েটা কে না নিয়ে গেলে হতো! সবই ঠিক আছে। আমাদের যাওয়াটাই কারও কারও চোখে ভুল। আমরা সবাই কমেন্ট করে গেলেই পারতাম। কমেন্ট করে এসব প্রশ্ন করার চেয়ে মহৎ কাজ নাই। যারা এমন কমেন্ট করেন আপনাদের প্রাণশক্তি প্রবল। নেগেটিভ কমেন্ট করে যাওয়া যেনতেন কাজ না! রীতিমতো এভারেস্ট জয়ের মতোই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একটা নেগেটিভ কমেন্ট করে নিজের ঈর্ষা, নিজের অপারগতা, নিজের মানসিক দারিদ্র্য গোছানোর আনন্দ; এভারেস্ট জয়ের আনন্দের চেয়ে কম কিছু নয়।’

দীর্ঘ পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘পেস্ট কালার জামা পরা ছেলেগুলো এলাকার স্বেচ্ছাসেবী। একে তো সব পানির নিচে; তাছাড়া আমরা তো সে অঞ্চলের পথঘাট আগে থেকে তেমন চিনি না। তারাই আমাদের অতি দুর্ভোগে থাকা মানুষদের ঘরে নিয়ে গেছে। বাচ্চা ছেলেটাও এক স্বেচ্ছাসেবীর ছোট ভাই, সেও ওই এলাকার। নারীর প্রয়োজনীয় নানা কিছু সরবারাহে মেয়েটা হেল্প করেছে। তাকে না নিয়ে একজন কমেন্টযোদ্ধাকে নিয়ে যাওয়ার মতো সুবুদ্ধি আমাদের ছিল না। আমরা বোকা, আমরা কমেন্টযোদ্ধাদের মতো চালাক নই। কমেন্টযোদ্ধারা জানেন একটা কমেন্ট করলেই বড় দায়িত্ব সম্পন্ন হয়।’

‘এবার বলি পিকনিকের কথা, এই যে দেখছেন আমড়া খাচ্ছি? এসব বানভাসি মানুষের দেয়া। এই লবণ-মরিচও উনাদের দেয়া। সারাদিন পানিতে, ডাঙায় সাঁতার শেষে, এই টক-লবণ-মরিচ যে কী শান্তি দিয়েছে, এতটা শান্তি আমরা বানভাসি মানুষদের দিতে পারি নাই হয়তো। উনাদের চোখে মুখে আমাদের প্রতি যেই ভালোবাসা দেখেছি, এতোটা ভালোবাসা গ্রহণের সামর্থ্য নিয়ে যাইনি হয়তো। আমরা বরং ভালোবাসা নিয়ে ফিরেছি। মনের মধ্যে একটু শান্তি নিয়ে ফিরেছি যে, উনারা আমাদের আপন করেছেন। কোমর সমান পানিতে ভেসেও কেউ কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছেন, ‘দুইটা ভাত আর শাক রান্না হইছে, তোমরা কেউ খেয়ে যাও; তোমাদের মুখ শুকনা লাগতেছে।’ এই কথার কাছে আপনাদের বাজে কথা কিচ্ছু না। ’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *