ঘরের মাটিতে স্পিনারদের দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের কৌশল ভারতের জন্য নতুন নয়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা নিজেদের দেশে টেস্ট সিরিজ হারেনি। ভারতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছিল অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ড। ২০১২ সালে ইংলিশরা ২-১ ব্যবধানে জিতে বাড়ি ফিরেছিল। এরপর থেকে ভারত তাদের ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষকে ক্রমাগত পরাস্ত করেছে। মূলত স্পিন বান্ধব পিচে তাদের স্পিনারদের দক্ষতাই এটির প্রকৃত কারণ।
ভারতের এমন সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি স্পিন বান্ধব পিচ তৈরি করা, যা রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো বিশ্বমানের স্পিনারদের উন্নতির সুযোগ দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে স্বাগতিকদের এই স্বাভাবিক সুবিধা ততটা সহজ নাও হতে পারে।
বাংলাদেশ দল সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজের মতো উঁচু মানের স্পিনারদের নিয়ে গর্বিত। দুজনেই তাদের স্পিন দক্ষতার জন্য স্বীকৃত। তাদের স্কোয়াডে তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের মতো দক্ষ স্পিনাররা রয়েছেন। তাই ভারত একটি সংশয়ের সম্মুখীন।
পুরোপুরি স্পিন নির্ভর পিচ বানালে বাংলাদেশের মতো দলের বিপক্ষে এটির ফল বিপরীতমুখী হতে পারে। কারণ দলটি এমন পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে সমানভাবে পারদর্শী। যার ফলে চেন্নাইতে দুই দলের মধ্যকার প্রথম টেস্টটি সম্ভবত লাল মাটির পিচে হবে।
চেন্নাইয়ে লাল এবং কালো দুই ধরনের মাটির পিচই রয়েছে। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসন্ন টেস্টটি সম্ভবত লাল মাটির পিচে গড়াবে। এ রকম পিচে সাধারণত কম জল শোষণ করে এবং দ্রুত শুকিয়ে যায়। যার ফলে তাড়াতাড়ি উইকেটে ফাটল ধরে। বিশেষ করে ম্যাচের শুরুতে উল্লেখযোগ্য বাউন্স পাওয়া যায়। এটি ভারতের পেস বোলারদের জন্য সুবিধার কারণ হবে। জাসপ্রিত বুমরাহ এবং মোহাম্মদ সিরাজ নতুন বলে প্রতিপক্ষের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারেন। তবে পাকিস্তান সফরে নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদরা যেভাবে পারফর্ম করেছেন, সেটি ধরে রেখে পিচের ফায়দা নিতে পারলে তারা রোহিত-বিরাটদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
অতীত বলছে, ম্যাচ যত গড়ায় লাল মাটির পিচ স্পিনারদের সহায়তা করতে শুরু করে। পিচ দ্রুত ভেঙে পড়তে শুরু করে, টার্ন এবং অপ্রত্যাশিত বাউন্স বোলাররা পান। এটি বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে। পেস এবং স্পিনের এই সমন্বয়ে সফরকারীদের সমস্যায় ফেলতে পারে ভারত।
বিপরীতে বাংলাদেশ কালো মাটির পিচগুলোর সঙ্গে বেশি পরিচিত, যা ধীরগতির এবং কম বাউন্সি। তারা নিজেদের সুবিধার জন্য ঘরের মাঠে এ ধরনের পিচ ব্যবহার করে থাকে। উল্লেখ্য, মিরপুরে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মতো দলকে কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে পরাজিত করেছে। চেন্নাইয়ের লাল মাটির উইকেট তাদের একটি ভিন্ন চ্যালেঞ্জ দেবে। বিশেষ করে ভারতীয় বোলারদের বাউন্সগুলো বাংলাদেশের ব্যাটারদের পরীক্ষায় ফেলতে পারে।
টেস্ট সিরিজের জন্য টাইগারদের শেষ ভারত সফর ছিল ২০১৯ সালে। ইন্দোর এবং কলকাতার পেস বান্ধব উইকেট দলটির ব্যাটারদের ভুগতে হয়েছিল। সেই সিরিজে ভারতীয় স্পিনাররা মাত্র পাঁচ উইকেট নিলেও দুই ম্যাচেই সফরকারীরা হেরে যায়। সেজন্য বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে বাউন্স এবং স্পিনের মিশ্রণ শক্তি টিম ইন্ডিয়া তৈরি করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আসন্ন সিরিজের জন্য ভারতের স্কোয়াডে পেসার এবং স্পিনার দুই ডিপার্টমেন্টকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ম্যাচ যত গড়াবে, সেই পরিস্থিতিতে যেন তাদের কৌশল সামঞ্জস্য করার বিকল্পগুলো হাতে থাকে, সেজন্যী এমন পরিকল্পনা । যদিও লাল মাটির উইকেট বাংলাদেশের জন্য একটি সুস্পষ্ট মৃত্যু ফাঁদ নাও হতে পারে।
এক কথায় বলা যায়, বাংলাদেশের জন্য একটি সুগঠিত ফাঁদ তৈরি করছে ভারত। লাল মাটির পিচের বাউন্স এবং স্পিন ব্যবহার করে ফায়দা নিতে তারা উদগ্রীব। এই কন্ডিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ মানিয়ে নিতে পারবে কিনা, সেটাই হবে এই টেস্ট সিরিজে তাদের পারফরম্যান্সের চাবিকাঠি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের স্মৃতি এখনো তরতাজা। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এবার ভারতে খেলতে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা টাইগাররা এবার টিম ইন্ডিয়ার জন্য সারপ্রাইজ প্যাকেজ হতেও পারে।
Leave a Reply