একবার জন্মিলে মরিতে হবেই। আর তাই তো জীবনের পরম ও চরম সত্য হলো মৃত্যু। সব প্রাণীকেই এর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবুও মৃত্যুকে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। কথায় বলে, ‘মৃত্যু বলে কয়ে আসে না’। আর তাই কার কখন মৃত্যু হবে তা আগে থেকে বোঝা মুশকিল।
তবুও কি মনে কখনো প্রশ্ন জেগেছে, বেশিরভাগ মানুষ কোন সময়ে ইহলোক ত্যাগ করেন? দিন-রাতের কোন সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়?
বিশ্বের অসংখ্য সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী রাতের তৃতীয়াংশকে মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। তৃতীয়াংশ বলতে রাত ৩টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যবর্তী সময়কে বোঝানো হয়।
কেউ কেউ ভোর ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে সময়টিকে সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে করেন। কারণ মানুষের শরীর তখন সবচেয়ে বেশি দুর্বল থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলছে এই সময়ে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসা গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দিনের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ভোর ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে হাঁপানি আক্রমণের ঝুঁকি ৩০০ গুণ বেশি থাকে।
কেন এমনটা হয়? এর প্রধান কারণ এই সময়ে শরীরে অ্যাড্রেনালিন এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হরমোনের নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। যার কারণে শরীরের শ্বাসতন্ত্র অনেক সঙ্কুচিত হয়ে যায়। একই সময়ে, রক্তচাপও দিনের তুলনায় সবচেয়ে কম থাকে। এই কারণেও অনেক মানুষ ভোর ৪টার আশেপাশে সময় মারা যায়।
ভারতের এনআইইউ ল্যাঙ্গোন মেডিক্যাল সেন্টারের ডা. রোশনি রাজের মতে, সকাল ৬টায় কর্টিসল হরমোন দ্রুত নিঃসরণ হয়। এই কারণে রক্ত জমাট বাঁধা এবং আক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্তু সর্বোচ্চ রক্তচাপ হয় রাত ৯টায়। এতে মৃত্যুও হতে পারে।
চিকিৎসক ডা. চন্দর আশরানীর মতে, দুর্বলতার কারণে মৃত্যুর কথা বলা সম্পূর্ণ ভুল। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
এছাড়া রাতে ঘুমের মধ্যেও অনেক মানুষ মারা যায়। এর কারণ স্লিপ অ্যাপনিয়া। এটি এমন একটি রোগ যাতে ঘুমের ভেতর মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
জীবন আর মৃত্যু সবই রহস্যে ঘেরা। একারণেই বিজ্ঞান ও ধর্ম উভয়ই তাদের জ্ঞান অনুযায়ী জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে তাদের তথ্য উপস্থাপন করে। তবে এখন পর্যন্ত জীবন-মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি, যাতে সবাই একমত হতে পারে।
Leave a Reply