শিগগিরই গঠন হচ্ছে নতুন আরো যেসব সংস্কার কমিশন!

সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি পৃথক কমিশন গঠন করেছে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেগুলো হলো- নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন। এবার গণমাধ্যম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সংস্কারে শিগগিরই নতুন কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে এই সরকার।

জানা গেছে, নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ঘোষিত ছয়টি পৃথক কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে আজকালের মধ্যে। ১ অক্টোবর থেকেই এই ছয়টি কমিশন কাজ শুরু করবে।

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে এই ছয়টি কমিশনের সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশনের ঘোষণা দেন। ঐ দিন তিনি শুধু কমিশনের প্রধানদের নাম ঘোষণা করেন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে, ১৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে ড. শাহদীন মালিকের পরিবর্তে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক, আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো ও আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (এআইবিএস) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আলী রীয়াজকে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ছয়টি কমিশনের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পর কমিশনগুলোর কর্মপরিধি ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্যান্য সদস্য ঠিক করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে—মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিশনগুলোকে সাচিবক সহায়তা দেবে।

উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগদান শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন।

ছয়টি কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রথম বারের মতো বৈঠক করেন গত ১৯ সেপ্টেম্বর। ঐ বৈঠকে অংশ নেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। বিদেশে থাকায় ঐ বৈঠকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার রোববার জানান, কমিশনের প্রধান হিসেবে তারা নিজেরাও স্ব স্ব কমিশনে সদস্য হিসেবে কারা থাকবেন—সেটির একটি প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছেন। কমিশনগুলোর কার্যপরিধি কী কী হতে পারে, কমিশনগুলো কী কী সুপারিশ করতে পারে, সেটিরও একটি ধারণাপত্র সরকারকে ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আশা করছেন, আজকালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল জানান, প্রতিটি কমিশনের সদস্যসংখ্যা হতে পারে ৮-১০ জনের।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান আরো জানান, সংস্কার কমিশনের সদস্যরা অবশ্যই অবৈতনিক হবেন। এখানে কোনো সম্মানি বা সুযোগ-সুবিধার বিষয় থাকলে ব্যক্তিগতভাবে তিনি আসতেন না। কারণ, তারা এসেছেন, দেশের স্বার্থে জনগণের জন্য কাজ করার জন্য।

১৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেছেন, এই ছয়টি কমিশন কাজ করার মধ্যেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় শাসন ব্যবস্থাসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের জন্য কমিশন করা হবে। কমিশনগুলোর রিপোর্টের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হয়তো কিছু হবে তাৎক্ষণিক, কিছু হবে স্বল্পমেয়াদী, কিছু দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। আবার কিছু সংস্কারের বিষয় থাকবে, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে।

গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, কিছু কিছু বিষয়ে সংস্কারের জন্য সরকার কমিশনের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করবে না, সেক্ষেত্রে সরকার নিজেই সংস্কারের উদ্যোগ নেবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কয়েক দিন আগে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, গণমাধ্যমের জন্যও সরকার একটি কমিশন গঠন করছে। মতিবিনিময়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের অনেকেও গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

১৯ সেপ্টেম্বর সংবাদ ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ-ও বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগদান শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন করা হবে। পুনর্গঠিত ইসি ভোটারতালিকা হালনাগাদসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করবে।’

একই দিন আসিফ নজরুলের সঙ্গে সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করবে। এই ছয়টি ছাড়াও পরবর্তীকালে আরো সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব টেবিলে আছে।

জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে ড. ইউনূস গতকাল দেশে ফেরায় আশা করা হচ্ছে, সহসাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হতে পারে।

নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য এবং ভোটারতালিকা হালনাগাদের পর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *