অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকারের মেয়াদ কত হবে তা সরকারই বলবে। নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা সরকারের মতামত না।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে সাক্ষাৎকারটি দেন তিনি। যা সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রচার করে ভয়েস অব আমেরিকা।
এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, তার বাহিনী ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে যেন নির্বাচন হতে পারে সে বিষয়ে সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করবে।
সেনাপ্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী এ সরকারের মেয়াদ ১৮ মাস কি না–প্রশ্ন করলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা সরকারের মতামত না। সরকার কোনো মত দেয়নি। সরকারের মেয়াদ কতক্ষণ তা সরকারের বলতে হবে। সরকার না বলা পর্যন্ত তো আর সেটা ঠিক হচ্ছে না। আমাদের মুখ থেকে যেটা শুনবেন সেটাই হবে তারিখ।
সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা চেষ্টা করছিলাম পুলিশকে দিয়ে করানোর। তবে পুলিশের মনোবল হারিয়ে গেছে। মানুষের কাছে গেলে তাদের কটূ কথা শুনতে হয়। কারণ মাত্র কয়েক দিন আগে তারা ছাত্রদের মেরেছে। পুলিশও মানুষ থেকে দূরে দূরে থাকছে। তো এতে আমাদের যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি ছিল সেটা কমে গেল। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যেটা বললাম, পুলিশের সবাই তো আর অন্যায় করে নাই। যারা অন্যায় করেছে আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করব, তাদের শাস্তি হবে। এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া। এরমধ্যে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। সমাবেশ, বিক্ষোভ হচ্ছে বিশেষ করে আমাদের পোশাকশ্রমিক কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেল। তখন এই প্রশ্ন উঠল সেনাবাহিনীকে ম্যাজেস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার জন্য। এরপর আমরা সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করলাম। এতে তারা রাজি হলো। তারা বলল, আমরা তো আছি কিন্তু আমাদের তো কেউ পরোয়া করছে না। আমাদের তো ক্ষমতা নেই কিছু করার। তখন আমরা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিলাম একটা সীমিত সময়ের জন্য।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব মর্যাদার কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সারা দেশে ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা পান তারা। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর এই প্রজ্ঞাপনে সংশোধন এনে ‘সশস্ত্র বাহিনী’ করা হয়। অর্থাৎ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়।
সশস্ত্র বাহিনীকে যে সময়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই পুলিশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস।
শিক্ষার্থীরা দেশ চালাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, তরুণদের হাতেই ক্ষমতা যাওয়া উচিত। বুড়োরাতো ভুল করে সব কিছু। তরুণরাও ভুলভ্রান্তি করবে। তারা আবার এর সংশোধন করবে। তাদের নেতৃত্বে তো একটা বড় কাণ্ড হয়ে গেল। তাদের অবিশ্বাস করার তো কোনো কারণ দেখছি না।
ভারতের সঙ্গে সম্পোর্কন্নয়ন নিয়ে সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা তাদের বলেছি যে, আমরা সুসম্পর্ক চাই। কারণ এটা ভারতেরও দরকার, আমাদেরও দরকার। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হলে কোনো জাতির জন্য মঙ্গলজনক হয় না। আমাদের দুই দেশেরই স্বার্থ হলো মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা। মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন এসে যায়। যেখানে একটি সম্পর্কে চির ধরে। তাদের গুলিতে বাচ্চা মেয়ে মারা গেল, বাচ্চা ছেলে মারা গেল। এগুলা আমাদের কষ্ট দেয়। আমরা মনে করি না ভারতীয় সরকার ইচ্ছা করে এটা করেছে। যে সমস্ত কারণে এসব ঘটনা ঘটে সেগুলো যাতে উৎখাত করতে পারি সেটা নিশ্চিত করতে চাই।
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে প্রত্যার্পণের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, এটা আইনগত বিষয়। নিশ্চয়ই আমরা তাকে ফেরত চাইব। যেখানেই থাকুক তিনি।
বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃত এ বিষয়ে আপনার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, আপনি পুরনো দিনের কথাবার্তা বলছেন। এরমধ্যে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। আপনার মনে হয় স্মরণে নেই এরমধ্যে। নতুন যা হচ্ছে সেটা আপনাকে দেখতে হবে তো। কত ছেলে প্রাণ দিল সেটা নিয়ে আপনার প্রশ্ন নাই। শিক্ষার্থীরা বলেছে, আমরা রিসেট বাটন পুশ করেছি। অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলব। এর জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।
৫ আগস্টের পর যে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে তা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে যেখানে অপরাধ করছে তার বিচার হবে। তা না হলে তো বিচার সম্পন্ন হবে না। আমরা যদি একপাক্ষিক বিচারে ফিরে যাই তাহলে তো আর গণঅভ্যুত্থানের মানে হলো না।
বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য সংস্কারের পর নির্বাচন দেওয়া এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
Leave a Reply