কানে শোঁ শোঁ শব্দ, কারণ ও সমাধান জানুন!

কানে শোঁ শোঁ শব্দ তৈরির সমস্যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় টিনিটাস। এ সমস্যার সম্মুখীন হলে অনেকে কানে ঝিঁ ঝি পোকার ডাকের মতো শব্দ শোনে। আবার অনেকে ঘন্টার মতো আওয়াজ শুনতে পান। এ সমস্যা ঘুমাতেও ব্যাঘাত তৈরি করে রোগীর।!

প্রথমেই আসুন জেনে নিই, কানে এমন সমস্যা তৈরি হওয়ার কারণ। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগী এক কানে অথবা দুই কানেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এ সমস্যা এমনিতেই রোগীর ভালো হয়ে যায়। তবে ব্যক্তিভেদে অনেকের ক্ষেত্রে এ সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরেও হতে পারে।

কারণ: টিনিটাস রোগের সমস্যা কানের মধ্যে হলেও এর উৎপত্তিস্থল মস্তিষ্ক। আমাদের মস্তিষ্ক অনেক নার্ভ দিয়ে গঠিত। একেক নার্ভের কাজ একেক রকম। মস্তিষ্কের যে অংশ দিয়ে শব্দ প্রক্রিয়াজাত করা হয় সেই অংশের নাম হল অডুটরি করটেক্স। আর এই অংশের মধ্যে থাকে অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভ ভেসটিবুলোকোকলিয়ার। এই নার্ভের সমস্যা হলে টিনিটাস হয়ে থাকে।

এছাড়াও অন্তঃকর্ণের কোষের সমস্যার কারণেও টিনিটাস হতে পারে। আমাদের কানের ভেতর ক্ষুদ্র লোম আছে যেগুলো শব্দ তরঙ্গের সাথে নড়াচড়া করে। এই কোষগুলো এক ধরনের ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক এই সিগন্যালের প্রতিক্রিয়া রূপে সিগন্যাল পাঠায়। এজন্য আমরা শব্দ শুনতে পাই।

যদি এই লোমগুলো ছিঁড়ে যায় বা সঠিকভাবে কাজ না করে তখন মস্তিষ্কে অনিয়মিত এবং ভুল ইলেকট্রিকাল ইমপালস পৌঁছায় যার ফলে টিনিটাস আক্রান্ত ব্যক্তি কানে অদ্ভুত শব্দ যেমন- ভোঁ ভোঁ, ঝিঁ ঝিঁ, শোঁ শোঁ ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে পায়। এছাড়াও উচ্চ শব্দ স্বর, কানে ময়লা জমা হলে এবং কানের মধ্যে এবনরমাল বোন বেড়ে গেলেও টিনিটাস হতে পারে।

জটিলতা: টিনিটাস রোগে ভুগলে রোগী ক্লান্তি, মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগে অসুবিধা, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, বিরক্তিসহ বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন।

চিকিৎসা: এই রোগে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত ফলদায়ক। ফিজিওথেরাপি কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন যুগান্তকারী আধুনিক চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে টিনিটাস থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায়।

ফিজিওথেরাপিউটিক এক্সারসাইজ মধ্যে রয়েছে- দুই হাত দিয়ে কানের পেছন থেকে সামনের অংশে ৭০-৭৫ বার ঘষতে হবে। বৃদ্ধাঙ্গুলসোজা রেখে কানের ভেতরে ও বাইরে নিন। ৭০-৭৫ বার এই এক্সারসাইজটি করুন।

দুহাত মাথার পেছনে নিয়ে ঘাড়ের উপরের অংশে যে গর্ত আছে ঠিক তার উপরে যে উঁচু জায়গা আছে সেখানে ইনডেক্স ফিংগার দিয়ে ৭০-৭৫ বার মাথায় চাপ দিন। এরপর কপালের দুপাশে ঘষতে হবে (৫-১০) বার। মাথার পেছনে, কানের উপরে ও পাশে কিছু ট্রিগার পয়েন্ট আছে যেগুলোতে ডিপফ্রিকশন করলে অল্প দিনের মধ্যে টিনেটাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চস্বরে হেডফোনে গান শোনা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, পিস্তল এবং মেশিনগান, হর্ণের শব্দ টিনিটাস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কানের প্রোটেকশনের জন্য এসব থেকে দূরে থাকুন। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রচুর পানি পান করুন, ধূমপান বর্জন করুন। প্রতিদিন এক্সারসাইজ করুন। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন এবং সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *