রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে তাকে মূলত অ্যানিমিয়া বলা হয়। হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত এক প্রকার প্রোটিন, যার মধ্যে আয়রন এবং ট্রান্সপোর্টস অক্সিজেন থাকে। শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
কম হিমোগ্লোবিনের ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্যকর হিমোগ্লোবিনের জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে একটি সুষম খাদ্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
পুরুষদের জন্য হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম প্রতি ডেসিলিটার। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম/ডিএল। স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি পরিমানে কম হলে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে।
আর গর্ভবতী নারীর জন্য ১১ বা তার বেশি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সাধারণত স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। এর থেকে কম হলে রক্ত দিতে হতে পারে।
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হওয়ার কারণ-
১. শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন এবং খনিজের অভাব হলেই দেখা দেয় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি। ছোট-বড় সবার শরীরেই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
২. যদি গর্ভবতীরা অপুষ্টির শিকার হন এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়; তহলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্ত প্রবাহে রক্তের ক্ষয় হয়। শরীরে অতিরিক্ত অক্সিজেনের অভাবে শরীরে শক্তির অভাব হয়। ফলে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
৩. এ ছাড়াও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে। শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাবে ত্বক হলুদ হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, ডাক্তার আয়রনের ঘাটতির জন্য নির্দিষ্ট ওষুধের একটি ডোজ লিখে দেন। হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কোনো রোগের লক্ষণ নয়।
৪. হিমোগ্লোবিনের অভাব শুরু হয়; যখন শরীর সঠিক পরিমাণে প্রোটিন পায় না। সাধারণত নারীরা গর্ভবতী হলে, তাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।
আবার কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে। সেই সমস্যাগুলো হলো-
ক্যান্সার, আয়রনের অভাব, লিউকোমিয়া, সিরোসিস, এইডস, একাধিক মেলোমা, লিম্ফোমা, জিনগত অস্বাভাবিকতা, ক্ষত থেকে রক্তপাত, মহামারিতে অতিরিক্ত রক্তপাত, পেটের আলসার, পেটের ক্যান্সার, অর্শ্বরোগ, বক্র কোষ রক্তাল্পতা, হাইপোথাইরয়েডিজম, হেমোলাইটিস, মূত্রাশয় থেকে রক্তপাত।
কিছু খাবার খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মান ঠিক রাখা যায়। খাবারগুলো হলো—
১. আয়রনসমৃদ্ধ খাবার: শরীরে লোহার ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ। হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আয়রনসমৃদ্ধ কিছু খাবার হলো কলিজা, লাল মাংস, চিংড়ি, পালংশাক, আমন্ড, খেজুর, শতমূলী ইত্যাদি।
২. ভিটামিন সি: ভিটামিন সি-এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি ছাড়া আয়রন পুরোপুরিভাবে শোষণ হয় না। পেঁপে, কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, ব্রোকলি, আঙ্গুর, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।
৩. ফলিক অ্যাসিড: ফলিক অ্যাসিড এক প্রকার ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। লাল রক্তকণিকা তৈরিতে এটি প্রয়োজনীয় উপাদান। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, কলিজা, ভাত, শিমের বিচি, বাদাম, কলা, ব্রোকলিতে প্রচুর ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।
৪. বিট: হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম।
Leave a Reply