ফাঁস হল ওবায়দুল কাদেরের পঞ্চপাণ্ডবের তালিকা!

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পরে মূলত পাঁচ নেতা দল পরিচালনা করেছেন। শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাখতের এই নেতারা। আর এই পঞ্চপাণ্ডবের কারণে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিনাশ ঘটেছে বলে মনে করেন দলের অনেক নেতাকর্মী।

এই পাঁচ নেতা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য-গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতেই এখন অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। প্রায় দেড় দশক টানা ক্ষমতায় থাকা দলটির সাংগঠনিক শক্তি যে আগে থেকেই ভেতরে-ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেটা এখন আবার উঠে আসছে দলের ভেতর থেকেই। নেতাকর্মীদের দাবি, এই পাঁচ নেতার দাপটে শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে অন্য নেতাদের। যার ফলে মাঠের তথ্য এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের থেকে দূরে সরে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি, দলীয় পদ দেওয়া, দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি তারাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। শেষ দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দল কাকে মনোনয়ন দেবে না দেবে, সেটিও ঠিক করেছেন এই পাঁচ নেতা। পছন্দের লোককে নেতা বানিয়ে নিজেদের দল ভারি করেছেন তারা। বিএনপিসহ অন্য দলের সঙ্গে বিরোধ-মীমাংসার ক্ষেত্রেও তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন।

গত ৩-৪ বছর ধরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই জেলা কমিটি অনুমোদন করতেন। এতে লেখা থাকতো সভাপতির সম্মতিক্রমে। যদিও এর আগে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমোদন এবং স্বাক্ষরিত কমিটিই গণমাধ্যমে প্রকাশ পেত। এভাবে ওবায়দুল কাদের এবং তার গং জেলা কমিটিগুলোতে নিজেদের পছন্দের লোক বসাতেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য। তার ভাষ্য, এভাবে কোথাও কোথাও হতো ‘কমিটি বাণিজ্য’।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, পঞ্চপাণ্ডবের বাইরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম কিছুটা সক্রিয় ছিলেন। তবে তাদের পঞ্চপাণ্ডবের বশ্যতা শিকার করে থাকতে হয়েছে।

অন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ ও আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়া ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতা সারা দেশের নেতাকর্মী-সমর্থকদের কাছেও তেমন পরিচিত ছিলেন না। কারণ পঞ্চপাণ্ডবের বাইরে আর কোনো কেন্দ্রীয় নেতার কাছে সাংগঠনিক কোনো ক্ষমতা ছিল না।

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ সীমিত হয়ে যায়। নিয়মিত আর দেখা করা যেত না। এই ফাঁকে পঞ্চপাণ্ডবের আধিপত্য ও ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাদের সঙ্গে দলীয় সভাপতির যখন-তখন দেখা হওয়া আর অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা না হওয়ার ফলে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে শেখ হাসিনা অনেক কিছুই আংশিক জানতেন। রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় দলের সাংগঠনিক বিষয়েও খোঁজখবর রাখা হতো না তার। ওই পাঁচজনের ১০ চোখে যা দেখতেন তাই বিশ্বাস করতেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *