আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল হচ্ছে না!

ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ। বিদ্যুতের দাম নিয়ে আপত্তি সত্ত্বেও আইনি জটিলতা এবং দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে না। বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত দুটি সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে মূল্য-সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে এই চুক্তি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় এক-দশমাংশ পূরণ করে। তাই আদানির চুক্তিটি সরাসরি বাতিল করা কঠিন হবে।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, শক্তিশালী প্রমাণ ছাড়া আন্তর্জাতিক আদালতে এ সংক্রান্ত আইনি চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে যদি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না হয়, তাহলে একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে শুল্ক কমাতে পারস্পরিক চুক্তি তথা বিদ্যুতের দাম কমাতে আদানির সঙ্গে আলোচনায় বসা।

আদানি গ্রুপের কোম্পানি আদানি পাওয়ার ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) বিদ্যুৎ দিচ্ছে। গত বছরের মার্চ থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় আদানির ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে।

তবে স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি দামে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে গত আওয়ামী লীগ সরকারও অস্বস্তিতে পড়েছিল। ২০১৭ সালে ওই চুক্তি করার ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করা হয়েছিল কি না, তা এখন খতিয়ে দেখবে অন্তর্বর্তী সরকারের পর্যালোচনা কমিটি।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, কমিটি বর্তমানে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে এবং এ ক্ষেত্রে আগেভাগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত ১৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তিবদ্ধ হয় বাংলাদেশ।

এরপর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শেখ হাসিনা সরকারের করা চুক্তিগুলো জাতির স্বার্থ রক্ষা করেছে কিনা, তা যাচাই করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। প্রধানত বিশেষ আইনের অধীনে শুরু করা এবং স্বচ্ছতার অভাব আছে–এমন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে এই কমিটি।

২৩- ২৪ অর্থ বছরের সর্বশেষ অডিট রিপোর্টের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রায় ১২ টাকা করে নেয়।

এই দর ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদকদের দরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।

আদানি ছাড়াও ভারতের অন্যান্য উৎপাদকের কাছ থেকে আরো ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে বাংলাদেশ।

আদানির একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, বাংলাদেশ যে চুক্তি পর্যালোচনা করছে, সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

দিন দিন বকেয়া বাড়ছে, তারপরও তো আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছি। বকেয়ার বিষয়টি দিনকে দিন আমাদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রমকেই এটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, বলেন ওই মুখপাত্র।

রয়টার্স লিখেছে, আদানির বিদ্যুৎ বিল বাবদ বাংলাদেশের বকেয়ার পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর অন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলো মিলিয়ে বকেয়ার পরিমাণ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ডলার সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশকে ওই অর্থ পরিশোধে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।

আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র বলেন, আমরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা আমাদের শিগগিরই বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে আদানির সরবরাহ করা বিদ্যুতের দাম কেন অন্যদের চেয়ে বেশি, সে প্রশ্নের উত্তর দেননি মুখপাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *