মৃগী রোগ কেন হয়? জানুন এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো!

মস্তিষ্কের জটিল একটি রোগের নাম মৃগী বা খিচুনি। অত্যন্ত গুরুতর এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন। এ রোগ থেকে বিপদমুক্ত থাকতে রোগীর পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও মেনে চলতে হবে সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছোট বয়সে বা ৬০ বছরের পর মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

মৃগী কী?
মৃগীর ইংরেজি প্রতিশব্দ এপিলেপসি (Epilepsy)। এটি নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়বিক রোগ, যাতে খিঁচুনি হয়। চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে জানা যায়, মস্তিষ্কে সবসময় ইলেকট্রিক্যাল প্রবাহ চলে। এই প্রবাহ হঠাৎ বেড়ে গেলে মস্তিষ্কে জটিলতা দেখা দেয়। আর মস্তিষ্কের জটিলতা থকেই রোগীর শরীরে শুরু হয় খিচুনি।

মৃগী রোগের লক্ষণ

মৃগী রোগে আক্রান্ত হলে বিভিন্ন উপসর্গ শরীরে দেখা যায়। এসব উপসর্গ হলো-

১। অহেতুক কাঁপুনি আসে।
২। রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় ( সাধারণত ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী হতে পারে)।
৩। শরীর শক্ত হয়ে যায়।
৪। হঠাৎ করেই বিশেষ ধরনের স্বাদ, গন্ধ পেতে শুরু করে রোগী।
৫। কাঁপুনি শুরুর সময় রোগী পড়ে যেতে পারে।
৬। কাঁপুনির পর জ্ঞান ফিরলে রোগী মনে করতে পারে না যে তার সঙ্গে কী হয়েছিল।
৭। খিচুনির সময় প্রস্রাব-পায়খানা হওয়া।
৮। জিহ্বা ও দাঁতে কামড় লাগা।

মৃগী রোগের মারাত্মক লক্ষণ

১। মৃগী রোগের সমস্যা টানা কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া।
২। খিচুনির সময় রোগীর আচরণে পরিবর্তন আসা।
৩। রোগী নীল বর্ণ ধারণ করতে পারে।
৪। ঝাঁকুনির মতো খিচুনি শুরু হওয়ার পর মুখ দিয়ে ফেনা বের হওয়া।

এ রোগের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে মস্তিষ্কে আঘাত, স্ট্রোক, মস্তিষ্কে টিউমার বা সংক্রমণ, জন্মগত ত্রুটি প্রভৃতিকে চিহ্নিত করা হয়। তবে মৃগী রোগের প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি।

আশপাশের মানুষ বা পরিবারের সদস্যের করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃগী রোগে খিচুনি শুরু হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা থেমে যায়। রোগীর এ সমস্যা সর্বোচ্চ এক মিনিট স্থায়ী হয়। তবে রোগীর এমন অবস্থায় ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।

চিকিৎসকরা বলছেন, মৃগী সমস্যায় হঠাৎ খিচুনি দেখা দিলে অনেকে অস্থির হয়ে রোগীর হাত-পা চেপে ধরে। কেউ আবার মাথায় পানি দেন। অনেকে রোগীকে ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। চামড়ার জুতা, গরুর হাড়, লোহার শিক ইত্যাদি রোগীর মুখে চেপে ধরতেও দেখা যায়। কিন্তু এসব কোন কিছুরই দরকার নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এসবের কোনটিতেই মৃগী রোগীর কোনো উপকারে আসে না।

চিকিৎসা

চিকিৎসা শাস্ত্রে মৃগী রোগের নানা চিকিৎসা রয়েছে। এ রোগের কার্যকরী অ্যান্টিএপিলেপটিক ওষুধ রয়েছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেলে এ রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব। তবে ওষুধের পাশাপাশি অতিরিক্ত উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে রোগীকে। সঠিক নিয়মে খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ঘুম রোগীর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে দারুণ সহায়ক।

উল্লেখ্য, বিপদমুক্ত থাকতে মৃগী রোগীকে পানিতে নামা, গাছে ওঠা, গাড়ি চালানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *