প্রথমে সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরা এবং নিরাপত্তা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে পরবর্তীতে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং মিডিয়ার সামনে সাকিবের টেস্ট ক্রিকেট থেকে দেশের মাটিতে অবসর নেওয়ার ব্যাপারে সমর্থন জানান।
এদিকে, সাকিব আল হাসান ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন এবং তার সমর্থন না দেওয়ার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে সাকিব বিনয়ের সাথে জানান যে, আন্দোলনের সময় তার পক্ষে সমর্থন জানানো উচিত ছিল, যা তিনি করেননি। এই পোস্টের মাধ্যমে সাকিব নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন এবং আন্দোলনকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
সাকিব আল হাসানের ওই অবস্থান ব্যাখ্যা করে দেয়া পোস্ট দেখে মনে হচ্ছিল সরকারও তার প্রতি খানিক সহানুভুতিশীল হবে এবং তার দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলার সম্ভাবনাও বুঝি বাড়বে। কিন্তু হঠাৎ করেই মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সাকিব বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছাত্র-যুবারা। গত ২দিন সাকিব বিরোধী স্লোগানে মুখরিত ছিল হোম অব ক্রিকেটের চারপাশ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নীরব থাকা এবং হাসিনা সরকারের সংসদ সদস্য ও দোসর হিসেবে সাকিবের প্রতি ছাত্র-জনতার ওই ক্ষোভ তার দেশে ফেরা এবং নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে সংশয় জাগিয়েছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন, সাকিব কি এই উত্তাল বিরোধীতার ঢেউয়ের মাঝে দেশে ফিরে টেস্ট খেলতে পারবেন?
এ প্রশ্ন যখন অনেকের মনেই উঁকি-ঝুকি দিচ্ছিল, ঠিক তখন তথা আজ (রোববার) মধ্যাহ্নে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপে সাকিব ইস্যুতে অনেক কথা বলেছেন।
সেখানে সাকিবের বিপক্ষে দেয়াল লিখন, প্রতিবাদ, তার বিপক্ষে খুনের মামলা ও তার দেশে ফেরার পর নিরাপত্তা সব প্রসঙ্গই ছিল। সাকিবের বিপক্ষে সাম্প্রতিক দেয়াল লিখন নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন ক্রিকেটার তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, আসার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা আমি দেখি না। তবে যেটা দেয়াল লিখনের কথা বলছেন বা সোশাল মিডিয়ায় কিছু দেখেছি, এটা তো আসলে আবেগের ব্যাপার। তাদেরও ওই অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক দেশ, সাংবাদিক অধিকার যেকোনো ধরনের ম্যুভমেন্ট বা যেকোনো কিছু করার। তবে এক্ষেত্রে আমার ইয়ে থাকবে কারো নিরাপত্তাকে যেন হুমকির মুখে না ফেলি।’
আইনগত বিষয়ে কোনোরকম মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যদি আইনগত কোনো বিষয় থাকে, আইন তো আইনের গতিতে চলে। এ বিষয়ে তো আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে, আমাদের পরিবেশটাও ভালো রাখতে হবে। না হলে বাইরের দেশগুলো বাংলাদেশে খেলতে আসতে নিরাপত্তার অভাবটা অনুভব করবে।’
জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবকে নিরাপত্তা দেয়ার কথা আবারো জোরেসোরে উচ্চারণ করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তার কথা, ‘দল দেওয়ার বিষয়টা তো বিসিবি দেখবে। রাষ্ট্রের জায়গা থেকে প্রত্যেক নাগরিকেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করবো।’
সাকিবের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বোঝানোর চেষ্টা করেন, যেহেতু ক্রিকেটারের পাশাপাশি সাকিব স্বৈরাচারের দোসর ও সংসদ সদস্য ছিলেন, তাই তার বিপক্ষে জনতার আবেগ, ক্ষোভ আছে। সেটা কতটা যৌক্তিক ও যুক্তি সঙ্গত তা নিয়ে কোন মন্তব্য না করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি মনে করি যে, আবেগের জায়গাটা অবশ্যই আছে। যেহেতু বড় একটা আন্দোলন হয়েছে এবং সাকিবের আগের ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যেটা উনি ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন উনার পোস্টে। তারপরও কিছু ইমোশন রয়ে গেছে। লজিক্যাল বা ইলজিক্যাল আমি ওই প্রশ্নে যাবো না। সেটা অন্য বিতর্ক।’
তবে সাকিবের দেশে ফেরা ও খেলা নিয়ে তেমন সমস্যা দেখছেন না ক্রীড়া উপদেষ্টা। এ সম্পর্কে তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা, ‘দেশে আসা কিংবা বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা তো থাকার কথা না। আমি যতটুকু জানি। আর আইনের বিষয়টা আইন মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা করতে পারবে। আমি বিশেষজ্ঞও না কিংবা আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও না।’
‘আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদেরও কথা হয়েছে। আসিফ নজরুল স্যার ইতোমধ্যে বলেছেন সংশ্লিষ্টতা না পেলে প্রাথমিক তদন্তেই আসলে যে মামলা হয়েছে হত্যা মামলা। ওখান থেকে নাম বাদ পড়ে যাবে।’
ক্রীড়া উপদেষ্টা আরও যোগ করেন, ‘আইন আইনের গতিতে চলবে। তবে তিনি বর্তমান সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও সাকিবের ব্যাপারে অবগত।’
এ সম্পর্কে আসিফ মাহমুদের ব্যাখ্যা, ‘তবে কোনো আইনি সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই এমনটা দেখা যাচ্ছে। আইন তো আসলে আইনের মতো চলে। সেটা তো আমি বলতে পারবো না। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আসিফ স্যার একটা কথা বলেছেন। তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং এটা ইতোপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে এত বড় একটা অভ্যূত্থান হয়েছে। এরপর আসলে যেটা হয় বিভিন্ন দেশে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল জায়গাটা ধরে রেখেছে। আমরা ওই ধরনের পরিস্থিতির দিকে আসলে এত বেশি যাই নাই। সবাই প্রত্যাশাও করছিল খুব বাজে অবস্থা হবে।’
Leave a Reply