’
‘গণঅভ্যুত্থান জন-আকাঙ্ক্ষা : রাষ্ট্র মেরামতে প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস যাদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছেন, তাদের অনেকেই আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা ধারণ করেন এমন ব্যক্তিদের সরকারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অপশক্তির রাজনীতি প্রসংগে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের করার অধিকার নেই। কারণ তারা গণহত্যায় সরাসরি ভাবে জড়িত।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান জন-আকাঙ্ক্ষা : রাষ্ট্র মেরামতে প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সরকার গঠিত হয়েছে জনরায়ে, জনগণের ইচ্ছায়। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, আমরা ধীরে ধীরে হতাশ হচ্ছি! প্রফেসর ইউনূস দেশের কৃতি সন্তান, বিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি। তিনি বিদেশে বাংলাদেশের ফেইস, তার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আমরা এই মুহূর্তে পেতাম না। তিনি ক্ষমতায় থাকতেও চান না, আগেও তাকে অফার করা হয়েছিল, থাকেননি। এখনো যে তিনি খুব ইনজয় করছেন, তা মনে হয় না। কিন্তু একটা কথা আমার বলতে হচ্ছে, তার টিম সিলেকশনটা ঠিক হয়নি। তিনি যাদের সঙ্গে নিয়েছেন, তাদের অনেকের আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা আছে। হয়তো প্রকাশ করতে পারেন না, কিন্তু ভাবভঙ্গিতে এমনই মনে হয়।
সংস্কারের জন্য কত সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘৬টি যে কমিশন করা হয়েছে, এদের প্রজ্ঞাপন করতেই ছয় দিনের বেশি সময় লেগেছে, যেটা দুই দিনের বেশি লাগার কথা না। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে। পতিত শক্তি আবার ফিরে আসতে চায়। আনসার বাহিনী পর্যন্ত কু করতে চায়, এমনই দুর্বল একটা সরকার।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রফেসর ইউনূস একেকজন উপদেষ্টাকে ৪টা-৫টা করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে এদের কোনো অভিজ্ঞতাই তো নেই। এই ব্যাপারে তাকে চিন্তা করতে হবে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ভালোদের নিয়ে দায়িত্ব দেন। দরকার হলে যে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছে, তাদের থেকে আরও লোক নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের টিমে খেলে এসেছেন অতীতে, তাদের আর মন্ত্রিপরিষদে আমরা দেখতে চাই না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার অনেক কথা বলে, কিন্তু একটা কথা তাদের মুখ থেকে শোনা যায় না যে নির্বাচন কবে হবে। ইলেকশন কমিশন কবে গঠন হবে! অরাজনৈতিক এবং বিজ্ঞ লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। অরডিন্যান্সের মাধ্যমে আইন যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তা দ্রুত করা যায়।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যে ক্ষতি করেছে বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা মনে করেছিলাম সুন্দর একটা দেশ আমরা পাব। গণতন্ত্র চিরদিন থাকবে বাংলাদেশের বুকে, কোনো বৈষম্য থাকবে না। মানবিক মর্যাদা, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু যতই দিন গেছে, ততই আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দূরে সরে গেছে। আমরা পেয়েছি একটা একদলীয় রাষ্ট্র— বাকশাল।
রাষ্ট্র মেরামতের ২৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, রাষ্ট মেরামতের জরুরি উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার করা। ডক্টর ইউনুসকে সামনে রেখে খুনি হাসিনার প্রেতাত্মারা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপতৎপরতায় লিপ্ত। আমরা রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কৃতির সংস্কার চাই। মৌলিক সংস্কারের দায়িত্ব জনগনের নির্বাচিত সরকারের। তাই পরপর ২ বারের বেশি একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন। সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবসরের ৫ বছরের মধ্যে নির্বাচনের অংশ গ্রহণ বেআইনী ঘোষণা। জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী দল বা জোটকে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কাস্টিং ভোটের ৫১% ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান। সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ী ও প্লট প্রাপ্তির সুবিধা বাতিল। নির্বাচনে প্রার্থী কর্তৃক পোষ্টার ব্যানার ফেস্টুন ও বিলবোর্ড দিয়ে প্রচার নিষিদ্ধ করে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে কমন পোষ্টার, মাইকিং ও ইউনিয়ন, উপজেলা ও মহানগরে ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সভা বা প্রার্থী পরিচিতি সভা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সকল প্রার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ডাক্তারদের ভিজিট পুনঃনির্ধারণ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরীক্ষার সুপারিশ করলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎককে জরিমানার বিধান, বেসরকারী চিকিৎসা শিক্ষা, সেবা ও ওষুধ প্রশাসনে যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করণ। সকল প্রকার ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি অতিমূল্যায়িত রয়েছে। তাই কাঁচামাল ও উৎপাদন, বিপণন ব্যয় বিবেচনা করে ঔষধের মূল্য পূণঃ নির্ধারণ। যানজট নিরসনে সংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল সচল। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রশিক্ষণ, কাউন্সিলিং, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহজীকরণ ও সড়ক বিভাজন নির্মাণ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় দোষী ব্যক্তির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে হবে।
অ্যাডভোকেট জোহরা খাতুন জুইয়ের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কারের ২৩ দফা তুলে ধরেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক বিরোধী দলীয় চিপ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। সাবেক যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এলবার্ট পি. কস্তা, ওলামাদলের মাওলানা শাহ নেছারুল হক, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইউসুফ আলী, যুগ্ম মহাসচিব নুরুল ইসলাম সিয়াম, ইউরোপ লেবার পার্টির সমন্বয়কারী মো. রাকেশ রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, মহিলা সম্পাদিকা নাসিমা নাজনিন সরকার, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শেখ মিজানুর রহমান, দফতর সম্পাদক মো. মিরাজ খান, মহানগর সাধারন সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম, গুলিবিদ্ধ নগর যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জহিরুল হক নোমান, ছাত্রমিশন সভাপতি সৈয়দ মো. মিলন ও সাধারন সম্পাদক নাজমুল ইসলাম মামুন প্রমুখ।
Leave a Reply