শ্বেতীর সমস্যা দ্রুত সমাধানে যা করণীয়!

শরীরের ‘ইমিউন সিস্টেম’ বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নিজের শরীরের বিভিন্ন কোষ ও কলাকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই জাতীয় রোগকে বলা হয় ‘অটো ইমিউন ডিজিজ।’ শ্বেতী বা ত্বকের দুধ-সাদা দাগও এই ধরনের ‘অটো ইমিউন ডিজিজ।’ ভিটিলিগো বা শ্বেতী নিয়ে সমাজে এখনও নানা কুসংস্কার আছে। ত্বকের এই সাদা দাগের সঙ্গে কুষ্ঠর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সেই আতঙ্কে আক্রান্ত মানুষটি ও তার পরিবার ভয়ানক ভেঙে পড়েন। শ্বেতী নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায়, অকারণেই অনেকে আতঙ্কে থাকেন। সামাজিক পরিস্থিতির কারণে মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরে তাদেরকে।

‘ওয়ার্ল্ড একজিমা কাউন্সিল’-এর এক ত্বক বিশেষজ্ঞ জানালেন, দেখতে অন্যরকম লাগা ছাড়া সেই অর্থে শ্বেতীর অন্য কোনো বিপজ্জনক দিক নেই।

ইউরোপ-আমেরিকার বাসিন্দারা শ্বেতীকে অসুখের পর্যায়েই ফেলেন না। শ্বেতীর দাগ মেলাতে ‘ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট কভার’ ব্যবহার করেন। আমাদের দেশের মানুষ অসুখ নিয়ে অত্যন্ত বিচলিত বোধ করেন, অবসাদে ভোগেন। তাই রোগের শুরুতে চিকিৎসা করলে শ্বেতীর সাদা দাগ
ত্বকের মধ্যের মেলানোসাইট কোষে থাকে মেলানিন, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙের ভারসাম্য রক্ষা করে। মেলানিনের ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে বা ভারসাম্য নষ্ট হলেই দেখা দেয় শ্বেতী। শ্বেতী বংশগতভাবেও হয়। প্রতি ১০০ জন শ্বেতী রোগীর মধ্যে ৩০ জনের ক্ষেত্রেই শ্বেতী হয় বংশগত ধারায়, মাতৃকুল বা পিতৃকুলের কারও না কারও থেকে জিনের প্রভাবে। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে শ্বেতী সাদা দাগ ছড়াতে থাকে নিজস্ব কারণে, যার মূলে রয়েছে মেলানিনের কারসাজি! বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ শ্বেতীতে আক্রান্ত। শোনা যায়, প্রয়াত শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনও এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

সাধারণত মুখমণ্ডল, কনুই, বুকেই প্রথমে শ্বেতী দেখা দেয়। আবার শ্বেতী চোখের পাশ দিয়ে, নাকের দুপাশে বা ঠোঁটের কোণ বা উপর দিয়েও শুরু হয়।

শ্বেতী ছোঁয়াচে নয়। ত্বকের নির্দিষ্ট জায়গায় যেখানে ত্বকের মধ্যে মেলানিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, সেখানে দেখা দেয় শ্বেতী। কিন্তু সারা শরীর জুড়ে যদি এই সমস্যা থাকে তাহলে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে বোঝাই না গায়ের রং আসলে কী ছিল! শরীরে যদি শ্বেতীর সম্ভাবনা থাকে তাহলে ১০ বছর বয়স থেকে তা দেখা দেবে।

চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন। যে মলম পেসক্রাইব করবে তা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম মেনে নিয়মিত লাগান। সম্পূর্ণ সেরে ওঠা সময় সাপেক্ষ। শুরু থেকেই পরিচর্যায় থাকতে হবে। পাঞ্চ গ্রাফটিং করে শ্বেতী সরিয়ে ফেলা যায়। যত অল্প বয়সে শ্বেতীর চিকিত্‍সা করা যায় তত ভালো। ডায়াবেটিস, হাইপার থাইরয়েড যাদের রয়েছে, তাদের শ্বেতী হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।

ফলের মধ্যে আঙুর, কমলালেবু, ব্লুবেরিজ, গুজবেরিজ, আচার, বেদানা, পেয়ারা, খাবেন না। এ ছাড়া দই, মাছ, সমুদ্রের মাছ, কাঁচা টমেটো, কাঁচা রসুন, জাঙ্ক ফুড, কফি, চকোলেট ও তেঁতুল খাওয়া উচিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *