ধংসের মুখে দেশের ক্রিকেট,হট্টগোলের জন্য দায়ী যিনি!

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা যখন শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন, তখন স্টেডিয়ামের বাইরে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তাদের দৃষ্টি এড়ায়নি। অনুশীলন শেষে তারা হোটেলে ফিরে যাওয়ার সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়টি তাদের নজরে আসে, যা প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের বিস্মিত করে তোলে। কিছু খেলোয়াড় ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজখবরও নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এবারের আন্দোলন পূর্ববর্তী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে। কিন্তু এবারের মূল ইস্যু ভিন্ন—এটি সাকিব আল হাসানের অবসর ও তার দেশের মাটিতে বিদায়ী টেস্ট খেলা নিয়ে। এই বিষয়টি ঘিরে সমর্থকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, যার মধ্যে একটি পক্ষ সাকিবের বিদায়ী টেস্ট খেলা ঠেকানোর চেষ্টা করছে।অনলাইনে লাইভ খেলা দেখুন

এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি দেশের ক্রিকেটে অভূতপূর্ব এবং সাকিবের মতো তারকার ক্যারিয়ারের শেষ মুহূর্তগুলোকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে। একইসঙ্গে, এ ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার প্রতিফলন হিসেবেও দেখা যেতে পারে, যা ক্রিকেটের বাইরেও প্রভাব বিস্তার করছে।

অন্যদিকে বসে নেই সাকিবিয়ানরাও। সর্বশেষ আজ হোম অব ক্রিকেটের সামনে আন্দোলনে নেমেছিল সাকিব ভক্তরা। প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হলেও একসময় হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এরপর যা হয়েছে মিরপুরে ভুলে যাওয়ার মতোই একটা দিন হয়ে থাকবে।

দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর নিরাপত্তা শঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে সরে যায় নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। শঙ্কায় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজও। প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের পর শেষ মুহূর্তে দেশটি বাংলাদেশ সফরে আসতে সম্মতি জানায়। এখন এই সিরিজ ঘিরেই অজানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যাকে কেন্দ্র করে এত কিছু সেই সাকিব কি আসলে দায় এড়াতে পারেন?

ভারত সিরিজ চলাকালে টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাকিব। টেস্ট ক্রিকেটের শেষ ম্যাচটা দেশের মাটিতে খেলতে চেয়েছিলেন। সরকারের তরফে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মিরপুর টেস্টের স্কোয়াডেও রাখা হয়েছিল তাকে। কিন্তু সাকিব বিরোধীদের আন্দোলনে বাধার মুখে পড়ে থমকে যায় কার্যত তার বিদায়ী টেস্ট খেলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুবাই পর্যন্ত এসে ফিরতে হয়েছে সাকিবকে।

অথচ সাকিব কানপুরেই বিদায় বলে দিলে এমন উত্তেজনা হয়তো এড়ানো সম্ভব ছিলো। তেমন কিছু হলে বিসিবি সেখানেও সাকিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে পারতো। যেমনটা টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলা মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রেও হয়েছে। সাকিব বিদায়ের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন দেশের মাটিকে। একজন খেলোয়াড় কোথায় বিদায় বলবেন, এটা নিয়ে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা থাকতেই পারে। বোর্ড বা সমর্থকদেরও এতে আপত্তির কিছু থাকতো না।

কিন্তু আপত্তিটা হচ্ছে, সাকিব খেলার সঙ্গে ‘রাজনীতির ধুলো’ মিশিয়ে ফেলেছিলেন। মাত্র সাত মাসের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারটাই যেন এখন তার গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি। তার ওপর তিনি রাজনীতিতে যে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ। দূর প্রবাসে থেকেও সাকিব নিজে হয়েছেন হত্যামামলার আসামি।

গণঅভ্যুত্থানের পর পতিত সরকারের এমপি মন্ত্রী দূরে থাক, ওই আমলের প্রশাসন যন্ত্রের অনেকেই যেখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে হত্যা মামলার নাম ওঠা সাকিবের সেখানে নির্বিঘ্নে খেলা চালিয়ে যাওয়াটা কিছুটা অবিশ্বাস্যই হতো! এমন পরিস্থিতিতে দেশে আসলে ঝামেলা হতে পারে সেটি হয়ত তিনি নিজেও জানতেন। সে জন্যই হয়ত অবসরের ঘোষণার সময় দেশে ফিরতে শর্তও জুড়ে দিয়েছিলেন। বিসিবি ও সরকারের কাছ থেকে দেশে আসা এবং দেশ ছাড়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন তিনি।

এমন আন্দোলনের আবহেই আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও প্রথম টেস্ট ভেন্যু মিরপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরপরও কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেলে এর ভার বহন করার শক্তি কতটা থাকবে বিসিবির?

সাকিব বিদায় বেলায় দেশবাসীকে পাশে চাইলেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, সাকিব শুধু কি টেস্ট খেলতেই এত আবেগী হলেন? দুবাই এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেন সরকারের গ্রিন সিগন্যালের আশায়। নেটিজেনদের অনেকেরই প্রশ্ন, এত মরিয়া হলে সিরিজের দুটো টেস্টই খেলেই অবসর নিতে পারতেন। প্রথম টেস্ট খেলেই অবসর নেওয়ার চিন্তাটাই তবে কেন? দেশে ফিরতে চাওয়ার পেছনে সাকিবের অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

ছাত্র আন্দোলনের সময় সাকিব দেশের বাইরে থাকলেও বিগত সরকারের জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে দেশের অনেকের। তাদেরই একটা অংশ প্রত্যক্ষ সাকিববিরোধী আন্দোলনে নেমেছে। অন্যদিকে সাকিবকে দেশে ফেরাতে জোরদারে আন্দোলনে তার ভক্ত-সমর্থকরাও। মিরপুরে অবস্থান প্রতিবাদের মতো কর্মসূচির বাইরেও তারা আইসিসি বরাবর মেইল চালাচালিও করছে বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া দাবি না মানলে ম্যাচ ভণ্ডুল করে দেওয়া এমনকি বিসিবি সভাপতির পদত্যাগের কথাও বলছেন তারা।

পক্ষে-বিপক্ষের এমন আন্দোলনের আবহেই আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও প্রথম টেস্ট ভেন্যু মিরপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরপরও কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেলে এর ভার বহন করার শক্তি কতটা থাকবে বিসিবির?

ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি সাধারণত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট দেশকে নিষিদ্ধ করে থাকে। যেমনটা সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছে এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কায়। এছাড়া আরেকটা ফ্যাক্ট হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা কোনো ভাবে অনিরাপদ মনে করলে বিপদ বাড়তে হবে খোদ দেশের ক্রিকেটেরই। সে ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠিন সিদ্ধান্তও আসা অসম্ভব না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *