নর্মাল ডেলিভারির মাধ্যমে মা হওয়া কি ঝুঁকির, যা বলছেন চিকিৎসক!

তীব্র প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে একজন নারীকে মা হতে হয়। এর থেকে কষ্টের আর কিছু নেই নারীর কাছে। আর আধুনিক এই সময় প্রচণ্ড ব্যথার ভয় কাটিয়ে উঠতে অনেকেই সিজারিয়ান ডেলিভারির (সি-সেকশন) দিকে ঝুঁকছেন। তবে বিভিন্ন গবেষণা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি অর্থাৎ নর্মাল ডেলিভারির বিকল্প কিছু হতে পারে না। এ ব্যথা সুখকর অনুভূতি ও প্রীতিকর।

সম্প্রতি ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নর্মাল ডেলিভারি সংক্রান্ত ব্যাপারে কথা বলেছেন গাইনোকলিস্ট ডা. ইন্দ্রনীল সাহা। এ চিকিৎসকের মতে, মা হওয়ার অনুভূতি একজন নারীর কাছে সেরা অনুভূতি। যা প্রতিটি মায়ের কাছে আজীবন রয়ে যায়। এ জন্য অনেক নারীই নর্মাল ডেলিভারি করাতে চান। যাকে চিকিৎসাভাষায় বলা হয় ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি।

ডা. ইন্দ্রনীল বলেন, তথ্য বলছে গর্ভবতী নারীদের অধিকাংশই নর্মাল ডেলিভারিতে সক্ষম। কিছু নারীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে তিনজন নারীর মধ্যে একজনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে সম্প্রতি। যা ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। কেননা, স্বাভাবিক বিষয় সবসময়ই স্বাস্থ্যকর। যদিও ভয় থেকে যায়। তবে এই ভয়ও ভেঙে ফেলতে হবে।

নর্মাল ডেলিভারি কি ঝুঁকির: নর্মাল ডেলিভারি হচ্ছে একদমই মানসিক ব্যাপার। এ জন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রথমেই মানসিক শক্তির প্রয়োজন। নর্মাল ডেলিভারিতে কিছু বিষয় হয়েছে। যেমন- কখন ব্যথা উঠবে, কখন জরুরি পরিস্থিতি হবে ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা রয়েছে কিনা। আবার অনেকেরই ধারণা নর্মাল ডেলিভারি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

মূলত অন্তঃসত্ত্বা নারীর লেবার পেন শুরু হওয়ার পর গর্ভস্থ শিশুর হার্টবিট নিয়মিত দেখতে হয়। অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যাপারেও নজর দিতে হয়। যা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। এ জন্য পরিকাঠামো জরুরি। পেইনলেস লেবার বা এপিডিউরাল ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যথাহীন লেবার ও এরপর সন্তান প্রসব এখন বেশ উন্নত পদ্ধতি। এখানে চিকিৎসকদেরও চিন্তা থাকে। কেননা, কিছু হলেই চিকিৎসকদের ওপর দায় পড়ে। এ জন্য অনেকে অস্ত্রোপচার বা সিজারকে নিরাপদ মনে করেন। তবে বিজ্ঞান বলছে, স্বাভাবিক নিয়মে যে পথে সন্তান প্রসব হয়, সেটাই মা ও সন্তানের জন্য স্বাস্থ্যকর।

সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেবে নেয়া: অন্তঃসত্ত্বা নারীর যদি কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা না থাকে, যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত, ব্লাড সুগার ঠিক থাকা, গর্ভস্থ শিশুর ওজন, আকার ও অবস্থান ঠিক থাকলে নর্মাল ডেলিভারির জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ জন্য হাসপাতালের পরিকাঠামো রয়েছে কিনা, সেটি দেখে নিতে হবে।

আগের প্রসব সিজার হলে পরেরটা নর্মাল ডেলিভারি করা যায়। তবে আগে দুবার সিজার হলে পরেরটা সিজারই করতে হয়। শারীরিকভাবে সুস্থতার পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বাকে মানসিকভাবেও সুস্থ হতে দিতে হবে। কেননা, সন্তান প্রসবের সময় মাকেই চাপ দিয়ে পেট থেকে সন্তান বের করতে হয়। এ জন্য তাকে মানসিকভাবে প্রচুর শক্তিশালী হতে হবে। আর শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতির জন্য অন্তঃসত্ত্বাকে নিয়মিত পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করতে হবে। তবে সবশেষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান প্রসব করা উচিত হবে।

যা জানা প্রয়োজন: শারীরিক জটিলতার জন্য নর্মাল ডেলিভারির সময় ইমারজেন্সি সিজারের প্রয়োজন হলে সেটি মানসিক চাপ তৈরি করে। শিশুকে ফরসেপ দেয়া হলে মায়ের ভ্যাজাইনাল টিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ থেকে রক্তপাত বেশি হয়। পরবর্তীতে তার প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখার সমস্যা হয়। আবার কখনো কখনো দীর্ঘসময় লেবার চললে মায়ের পোস্টপার্টম হেমারেজও হয়। ইউটেরাস থেকে রক্তক্ষরণও অনেক বেশি হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *