ঠান্ডা বা গরম, আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন কমবেশি সবারই জ্বর হয়। সাধারণত তিন-চারদিনে জ্বর ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা জ্বরের সময় হওয়া অন্যান্য অসুখগুলো কয়েকদিন থেকে যায়। ফলে বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করতে হয় আমাদের।
জ্বর হওয়ার সময় বা সেরে যাওয়ার পর অনেকেরেই ঠোঁটের কোণে ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়। এই ফুসকুড়ি ঠোঁটের ডান-বাম বা মাঝ বরাবরও হয়ে থাকে। এ সময় মুখো স্বাভাবিকের মতো খোলা যায় না। যাকে আমরা বলে থাকি জ্বরঠোসা বা জ্বর ঠুঁটো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে কোল্ড সোর বা ফিভার ব্লিস্টার বলা হয়। আর এই জ্বরঠোসা কেন হয়, হলে করণীয় কী―এ সময় দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর পপুলার মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নওসাবাহ্ নূর। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
লক্ষণ: জ্বরঠোসা হওয়ার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ঠোঁটের চারপাশে টানটান ব্যথা অনুভব হবে। ফোসকা বা ঠোসা উঠবে। ফোসকার ভেতরে পানির মতো এক ধরনের তরল থাকে। আর সেই ফোসকাগুলো ফেটে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে চলটা পড়ে বা শুকিয়ে যেতে থাকে। অনেক সময় বমি বমি ভাব বা বমি হয়, সঙ্গে মাথাব্যথা হতে পারে এবং খাবার খাওয়ার সময় বা গিলতে সমস্যা হয়।
হওয়ার কারণ: সাধারণত হারপিস সিপ্লেক্স (এইচএসভি১) নামক এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের জন্য জ্বরঠোসা হয়ে থাকে। হারপিস ভাইরাস হচ্ছে শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শরীর কখনো কোনো কারণে দুর্বল হলে বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পেলে ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা দিয়ে থাকে। শারীরিক কোনো অসুস্থতা, অধিক মানসিক বা শারীরিক স্ট্রেস, ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতিজনিত (ভিটামিন বি, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড) সমস্যা থেকেও জ্বরঠোসা হতে পারে।
ঘরোয়া চিকিৎসা: জ্বরঠোসা হলে প্রথমে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা করতে পারেন। এ জন্য আক্রান্ত স্থানে কোল্ড কম্প্রেসন ও বরফ ধরে রাখতে পারেন। এতে ফোলাভাব কমে যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বরঠোসায় অ্যান্টিভাইরাস ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। লবণ ও কুসুম গরম পানি দিয়ে কয়েকদিন মুখ ধুলে প্রদাহ কমবে। এতে ক্ষতের চারপাশ পরিষ্কারও থাকবে। পানির সঙ্গে অল্প পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়ে পেস্ট তৈরি করে ক্ষত স্থানে লাগাতে পারেন। আবার নারকেল তেল বা সরিষার তেলও লাগাতে পারেন। এতে যন্ত্রণা কমবে।
আক্রান্ত স্থানে মধুও লাগাতে পারেন। কেননা, মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট উপাদান রয়েছে। আবার অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এতেও ব্যথা কমে থাকে।
জ্বরঠোসা হলে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত, ঝাল, অ্যাসিডিটি এবং জাম্বুরা, টমেটো, কমলা ও মাল্টা খাবারগুলো কয়েকদিন এড়িয়ে চলতে হবে। ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য পানি পানের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া যাবে না। জ্বরঠোসায় ও এর আশপাশে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন। এতে ত্বক শুকিয়ে আর ফাটবে না।
প্রতিরোধে করণীয়: জ্বরঠোসা ছোঁয়াচেজনিত হওয়ায় সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত চামচ, পানির গ্লাস, রেজার, লিপজেল, তোয়ালে, রুমাল, টিস্যু ও অন্যান্য জিনিস শেয়ার করা যাবে না। আক্রান্ত হলে ছোট সন্তানদের কখনো চুমু দেয়া যাবে না। আর ঠোঁসায় হাত লাগলে বা স্পর্শ করলে তাৎক্ষণিক হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন: রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যদি কম থাকে যেমন, অন্তঃসত্ত্বা নারী, ক্যানসার বা ডায়াবেটিসের রোগী, কেমোথেরাপি নেয়া ব্যক্তি বা শিশুর জ্বরঠোসা হলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে। ঠোঁটে না হয়ে যদি চোখের আশপাশে ঠোসা হয় কিংবা জ্বরঠোসা যদি ক্রমশ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, ১০ দিনের বেশি সময় যদি স্থায়ী হয় এবং বছরে ছয়বারের বেশি জ্বরঠোসা হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
Leave a Reply