আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী আনোয়ারুল হলেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি!

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি কয়েক বছর ধরে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মে জর্জরিত। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত পদত্যাগ করেন। তবে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা এখনো ক্ষমতায় বহাল রয়েছেন। সম্প্রতি ব্যাংকটির নতুন এমডি হয়েছেন মো. আনোয়ারুল ইসলাম। বিস্তর অভিযোগ কাঁধে নিয়েও তিনি কৌশলে ব্যাংকের এমডির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক খাতে দুর্নীতির দায়ে আলোচিত চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের সঙ্গে মিলেমিশে দুর্নীতি করেছেন এই আনোয়ারুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী নাফিস সরাফাতের লা মেরিডিয়ান হোটেল, বেস্ট হোল্ডিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচালক পদে ছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের নতুন এমডি আনোয়ারুল ইসলাম। তবে সরকার পতনের পর নাফিস সরাফাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আনোয়ারুলের নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নাফিস সরাফাতের অর্থ কেলেঙ্কারি ও বিভিন্ন আর্থিকপ্রতিষ্ঠান দখলের পেছনে আনোয়ারুল ইসলামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। ব্যাংক খাতের এই সংস্কারের সময় এসেও তিনি কৌশলে এমডির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি কানাডায় বাড়ি কিনেছেন। অবৈধভাবে আয়ের ১৮ কোটি টাকা তিনি শ্যালকের নামে লেনদেনও করেছেন।

এমন অবস্থায় অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এসবের প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভে নামার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের মতে, দুর্নীতিবাজ ও অনভিজ্ঞ শীর্ষ নির্বাহীদের পদে থাকতে দেওয়া হলে আগামীতে অগ্রণী ব্যাংক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) থেকে মো. আনোয়ারুল ইসলামকে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি করা হয়েছে। তিনি সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদুল কবিরের স্থলাভিষিক্ত হলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন নিয়োগ পাওয়া অগ্রণী ব্যাংকের এমডি আনোয়ারুল ইসলামের বিরিুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে তাকে প্রতিষ্ঠানটির এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে মো. আনোয়ারুল ইসলামের মতো একজন দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হবে- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন গ্রুপকে অর্থ পাচারে সহায়তাকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আনোয়ারুল ইসলাম। আর তিনিই কিনা এই সংস্কারের সময় এমডির পদ বাগিয়ে নিলেন। তার মতো এমন দুর্নীতিগ্রস্ত এমডিকে বহাল রেখে কীভাবে ব্যাংকের সংস্কার সম্ভব?

অভিযোগ রয়েছে- ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) থাকা অবস্থায় মো. আনোয়ারুল ইসলাম কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত থেকেছেন। তারা বিগত সরকারের উচ্চপদস্থ সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে অবৈধ ঋণ বরাদ্দ, সন্দেহজনক পোস্টিং এবং অন্যান্য দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে কর্পোরেট গ্যারান্টির ভিত্তিতে বড় ঋণ প্রদান এবং অসাধু গ্রাহকদের জাল বন্ধকের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থার জন্য এমডি ও ডিএমডির অদক্ষতাকে দুষছেন কর্মকর্তারা। সুশাসন না থাকায় এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দূরদর্শীতার অভাবের সুযোগ নিয়ে ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম ব্যাংকে প্রমোশন ও বদলি বাণিজ্য করছেন- এমন অভিযোগও রয়েছে কর্মকর্তাদের।

অভিযোগ রয়েছে- মো. আনোয়ারুল ইসলাম অবৈধভাবে আয় করে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন। তিনি অবৈধভাবে আয়ের ১৮ কোটি টাকা তার শ্যালকের নামে লেনদেন কেরেছেন। গত ৯ মাসে অবৈধভাবে আয় করেছেন অর্ধ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে তিনজনকে পদোন্নতি দিয়ে অবৈধভাবে আয় করেছেন কোটি টাকা। তার বান্ধবী ফাতিমা অ্যানিকে অবৈধভাবে প্রমোশন দিয়ে বানিয়েছেন এজিএম। বিভিন্ন সময় তার অবৈধ আয় এবং নানা দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত হলেও থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সুশাসনের অভাবে ধসে পড়ছে অগ্রণী ব্যাংকের সব সূচক। খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা, আমানত কমেছে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং বিনিয়োগ কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মূলধন ঘাটতিও বেড়েছে। এছাড়া দুই বছর আগে লাখো কোটির ক্লাবে যোগ দেওয়া অগ্রণী ব্যাংকের আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার কোটি টাকায়। এমনকি আমানতের অভাবে নতুনভাবে বিনিয়োগও করতে পারছে না ব্যাংকটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *