ছাত্রলীগের আলোচিত সেই নেত্রীরা বর্তমানে কে কোথায় আছেন!

আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এবং এর নেত্রীদের অতীতের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে নেত্রীরাও ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন, যারা শিক্ষার্থী নির্যাতন, হলে সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন ও হুমকির ঘটনাতেও তাদের নাম উঠে আসে।

আতিকা বিনতে হোসাইন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখার সভাপতি এবং ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন যে, আতিকা শিক্ষার্থীদের মিছিলে যেতে বাধ্য করতেন, এবং না গেলে তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন। তার দাপট এতটাই ছিল যে, হলের অনেকেই তাকে ভয় পেতেন। ১৭ জুলাই রাতে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা তাকে ও অন্য ছয় নেত্রীকে হল থেকে বের করে দেন, যার পর আতিকা আত্মগোপনে চলে যান এবং তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ ঘোষণার পর এসব নেত্রীদের আর আগের মতো দাপুটে অবস্থায় দেখা যাচ্ছে না, এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এখন আরও বেশি করে আলোচিত হচ্ছে।

তামান্না জেসমিন রিভা ইডেন মহিলা কলেজের ছয়টি হলের ৩৮টি কক্ষের অঘোষিত মালিক ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা। এসব কক্ষের প্রতিটিতে আটজন করে শিক্ষার্থী থাকতেন। অভিযোগ আছে, তিনি প্রতি মাসে প্রতিটি সিট থেকে দুই হাজার টাকা করে ভাড়া নিতেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সে হিসাবে প্রতি মাসেই তার ছয় লাখ টাকা সিট-বাণিজ্য থেকে অবৈধ আয় হতো। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে রিভাকে হল ছেড়ে পালাতে দেখেছেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে রিভা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

আকলিমা আক্তার প্রভাতী রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্স (হোম ইকোনমিকস) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী। গত সেপ্টেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। আর রাজনীতি নয়, সংসারে মনোযোগী হতে চান বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।

ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জেসমিন শান্তা। মারধরে আহত রোকেয়া হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাস তন্বী এ ঘটনায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শান্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

ছাত্রলীগের ক্ষমতাধর নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন বেনজির হোসেন নিশি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিশির ক্ষমতা ছিল অসীম। অভিযোগ আছে, লেখক ভট্টাচার্য্যের কমিটি বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজি থেকে প্রাপ্ত অর্থের চার ক্যাশিয়ারের একজন ছিলেন তিনি।

ফরিদা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফরিদা পারভীন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ পান। সর্বশেষ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হতে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন তিনি। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সুপারিশে ঢাকা সিটি কলেজে প্রভাষক হয়েছিলেন তিনি। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি সেই চাকরি হারান, চলে যান আত্মগোপনে।

সেলিনা আক্তার শেলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সেলিনা আক্তার শেলী ছিলেন কলেজের অঘোষিত শাসক। তার কথায় যেন চলত ক্যাম্পাসের সব কিছু। কেউ কথা না শুনলেই নেমে আসত নির্যাতন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিল-মিটিংয়ে যেতে বাধ্য করা, কেউ যেতে না চাইলে নির্যাতন করা ছিল তার নিয়মিত কাজ। ক্যান্টিনে খাবারের প্যাকেজের নির্ধারিত মূল্য ৮০০ টাকা থাকলেও শেলীর কথায় নেওয়া হতো এক হাজার টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *