মেসের সদস্যসহ বিভিন্নজনের নিকট থেকে ৩০ লাখ টাকা ধার নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই মেস পরিচালক আফসানা মীমের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিষপান করার পর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত আফসানা মীম মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের জনৈক মামুন মোল্লার মেয়ে। শহরের ঝিলটুলীতে একটি বহুতল ভবনের একাধিক ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মেস পরিচালনা করতেন তিনি।
গত বুধবার ভোরে তিনি কাউকে কিছু না বলে তার মালামাল নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তিনি অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে প্রচুর টাকার ঋণী হয়ে পড়েন বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় পাওনাদারেরা মামলাও দায়ের করেন।
এরইমধ্যে শনিবার চট্টগ্রামের কোনো এক বন্ধুর বাসায় থাকা অবস্থায় তার স্বামী মোহাম্মদ সাব্বিরের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেড় ঘণ্টার একটি লাইভ ভিডিও পোস্টে তার এই করুণ পরিণতির নানা কারণ তুলে ধরেন মীম। তিনি এ সময় নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে তার নানা চড়াই উতরাই পেরোনোর কথা বলেন। এ সময় তার কাছে কেউ টাকা পাবে না বলে জানিয়ে তিনি কয়েকজনের নামোল্লেখ করে তাদের কারণেই এই পরিণতি বলে জানান। তিনি মেসের বর্ডারদের নিজের মেয়ের মতো বলে উল্লেখ করে তাদের অনেক ভালবাসতেন বলে জানান। মীম একহাতে বিষের বোতল নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ব্যবসাটা বড় হয়ে গেছে দেখে ওদের নজরে পড়ে গেছে। আজ ওরা আমাকে শেষ করে দিছে।
‘যারা আমাকে ভালোবাসার মানুষ থেকে আজ দূরে সরিয়ে দিলো, তোরা ওদের কাউকে ছাড়িস না।’ বেশ কয়েকজনকে তার এই নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী করে লাইভ ভিডিওতে থেকেই বিষপান করেন তিনি। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়।
আড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বাবু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মীমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোমবার বাদ মাগরিব মীমের নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন করার কথা রয়েছে।
জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার ডায়বেটিক হাসপাতালের সামনে একটি ১১তলা ভবনের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আফসানা ছাত্রী হোস্টেল নামে একটি মেস চালু করেন আফসানা মীম। ৬টি ফ্ল্যাটের বিভিন্ন কক্ষে প্রায় ১২০ জন ছাত্রী রয়েছেন। একই বিল্ডিংয়ের আরেকটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে সপরিবারে থাকতেন তিনি। গত বুধবার ভোরে হঠাৎ একটি হলুদ পিকআপ ও দুটি ভ্যানযোগে তার পরিবারের সব মালামাল নিয়ে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
Leave a Reply