লিংকডইন প্রতিষ্ঠাতা রেইড হফম্যানের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, আগামী দশকের মধ্যে প্রচলিত ৯টা-৫টা কাজের মডেল বিলুপ্ত হতে পারে। তার মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার কর্মক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আনার একটি কারণ হলেও আসল কারণ হলো চাকরির অনিশ্চয়তা ও কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জগুলো। ২০৩৪ সালের মধ্যে কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ের বদলে চুক্তিভিত্তিক ফ্লেক্সিবল কাজের দিকে ঝুঁকবেন, যেখানে সুবিধামতো সময় বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকবে।
এটি ভারতের মতো দেশে বড় পরিবর্তন আনতে পারে, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে নির্দিষ্ট অফিস সময় মেনে কাজের প্রবণতা প্রচলিত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন পরিবর্তন কর্মীদের জন্য কর্ম-জীবন ভারসাম্য এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে।
অফিসে ৮-৯ ঘণ্টার কাজের সময়সীমা অতীত কেন হবে? এই কাজের নিয়ম চালুই বা হলো কীভাবে?
কোথায় প্রথম চালু হয় দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের নিয়ম? এই ধারণার উৎপত্তি কোথায়? একেই কি সবচেয়ে কার্যকরী মডেল ধরে নেওয়া যাবে?
আমেরিকায় প্রথম চালু হয়েছিল দৈনিক ৮ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৫ দিন কাজের কর্মসংস্কৃতি। এই নিয়ম কোনো সংস্থা বা আইনের চাপে শুরু হয়নি।
নেপথ্যে ছিল শ্রম, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দীর্ঘ জটিল সমীকরণ।
প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা চালু হওয়ার আগে বিশ্বজুড়ে কাজের সময় আরও বর্ধিত ছিল। সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ ঘণ্টা কাজের নজিরও খুঁজে পাওয়া গেছে।
শিল্প বিপ্লবের সময়কালে কাজের মধ্যে পরিবারের শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাও দেখা গিয়েছিল।
সাধারণভাবে বলতে গেলে, ১৮০০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কর্মদিবসের দৈর্ঘ্য ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছিল। ১৯২০ সালে এসে সেই সময়সীমা থিতু হয়।
তবে আমেরিকা ও ইউরোপের শ্রমিক সংগঠনের ক্রমাগত লড়াইয়ের ফলে কর্মীদের কাজের পরিবেশ ও সময়ের উন্নতি ঘটে।
১৯২৬ সালে হেনরি ফোর্ডের সংস্থা ফোর্ড মোটর দিনে ৮ ঘণ্টা, ৫ দিনের কর্ম সপ্তাহ চালু করে।
ফোর্ড ঘোষণা করেছিলেন, ৮ ঘণ্টা কাজ করলে প্রত্যেক শ্রমিককে দিনে ৫ ডলার দেবেন, যা সেই সময় একজন শ্রমিকের গড় পারিশ্রমিকের প্রায় দ্বিগুণ ছিল।
ফোর্ড মনে করতেন, অল্প সময়ের জন্য কাজ করালে শ্রমিকের কাজ করার গতি বেড়ে যায় ও উৎপাদন বাড়ে।
এরপর আসরে নামেন কেলগস সংস্থার মালিক ডব্লিউ কে কেলগ। ১৯৩০ সালে শ্রমিকদের বেতন কিছুটা কমিয়ে ৮ ঘণ্টার শিফটের পরিবর্তে ছয় ঘণ্টা শিফট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
তবে পরবর্তীতে কেলগস সংস্থায়ও এই বাঁধাধরা সময়সীমার বহু পরিবর্তন হয়।
আমেরিকায় ‘ফেয়ার লেবার স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট’ চালুর পর নিয়ম করা হয় নিয়োগকর্তারা সপ্তাহে ৪৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন এমন সমস্ত কর্মচারীদের অতিরিক্ত বেতন দেবেন।
অবশ্য দুই বছর পর এই আইন সংশোধন করে কর্মসপ্তাহ কমিয়ে ৪০ ঘণ্টা করা হয়।
১৯৪০ সাল থেকে আমেরিকায় সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কর্মসপ্তাহ আইনে পরিণত হয়। সেই থেকেই সারা বিশ্বে চালু হয় খাতা-কলমে ৮ ঘণ্টা কাজের সময়ের দৈর্ঘ্য। সম্প্রতি চলতি বছরের পরিসংখ্যান পেশ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। যেখানে গোটা পৃথিবীর দেশগুলোর কর্মসময় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কোন দেশে চাকরিজীবীদের একটানা কতক্ষণ কাজ করতে হয় তার পূর্ণ তথ্য জানানো হয়েছে এই রিপোর্টে।
সেই রিপোর্টে স্পষ্ট ইংল্যান্ড, আমেরিকার কর্মচারীদের তুলনায় এ দেশের প্রত্যেক কর্মচারী নির্দিষ্ট সময়ের অনেক বেশি কাজ করছেন।
ভারতে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের একাংশের দাবি, তাদের ওপর কাজের চাপ বাড়িয়েই চলেছে সংস্থা। ফলে বাড়ছে কাজ করার সময়।
সাপ্তাহিক হিসাব ধরলে ভারতের চাকরিজীবীরা মোট ৪৬.৭ ঘণ্টা কাজ করে থাকেন। ৬ দিন অফিস হলে রোজ ৭. ৭৮ ঘণ্টা। ৫ দিন অফিস হলে ৯.৩ ঘণ্টা।
তবে ৮ ঘণ্টা কাজের সময় বাস্তবায়িত হয় না- এমন অভিযোগ অনেক কর্মচারীর।
Leave a Reply