মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ৮ , তারপরও তিনি মুক্তিযোদ্ধা!

জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসাল ১৯৬৩ইং। সেই হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তার বয়স ৮ বছর। বয়স অনুসারে যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি শিশু বয়সী থাকলেও বর্তমানে কাগজে কলমে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউপির বাসিন্দা মনোয়ার হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের মতে, দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও বর্তমানে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

কিন্তু যুদ্ধকালীন শিশু বয়সী মনোয়ার কীভাবে মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখালেন? এমন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১২ সালে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন মনোয়ার। সে সময় জন্মসাল ১৯৬৩ থাকলেও ২০২১ সালে এসে জন্মসাল ১৯৫১ চেয়ে এনআইডির তথ্য পরিবর্তনের জন্য কমিশন বরাবর আবেদন করেন মনোয়ার। আবেদনের সময় দেয়া হলফনামায়ও পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয় প্রবাসী। পরবর্তীতে সেই আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য দায়িত্ব পড়ে “গ” ক্যাটাগরি তথা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর।

কমিশনের সার্ভার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে তৎকালীন কর্মকর্তা তার স্ব-শরীরে উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে আববেদনটি মঞ্জুর করেন। ফলে ১৯৫১ জন্মসালের মাধ্যমে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার বয়স দাঁড়ায় ২০ বছর। আর নাগরিক সেবার এই সুযোগের অসৎ ব্যবহার করেন মনোয়ার। এদিকে ২০২১ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স বাড়ানোর পর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক গেজেট ২৯৭১ ও মুক্তিযোদ্ধার নম্বর:০১১৫০০০৮৩৮৩ মূলে মনোয়ারকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করা হয়।

গেজেটে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৮৫তম সভার আলোচ্যসূচি ০৫ সুপারিশ/সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেসামরিক গেজেট নিয়মিতকরণ করা হলো। এ ছাড়াও তাকে দেয়া সনদে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও ২০২১ এ এনআইডির তথ্য পরিবর্তনে প্রতীয়মান হয় যে, মনোয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। পরবর্তীতে মনোয়ারের এমন কর্মকাণ্ড নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হলে ২০২৪-এর চলতি মাসে তার এনআইডি রোলব্যাক করেন কমিশন। ফলে বর্তমানে তার এনআইডিতে জন্মসাল ১৯৬৩ এবং সেই অনুসারে শিশু বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন মনোয়ার।

অভিযোগ রয়েছে, সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি ও আ’লীগ নেতার ছেলের সহায়তায় অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা বনে যান মনোয়ার। এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মনোয়ার প্রথমে এনআইডির তথ্য পরিবর্তনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এমন কিছুই হয়নি। কিন্তু প্রতিবেদকের হাতে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে এবং এনআইডি সংশোধনের পর মুক্তিযোদ্ধা হলেন কীভাবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *