অধিভুক্তির সাত বছরে রাজধানীর সাত কলেজে মানোন্নয়নের পরিবর্তে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি। শিক্ষক ও ক্লাসরুম সংকট, ফল প্রকাশে বিলম্ব, গণহারে ফেল করিয়ে জরিমানা আদায়ের অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময় সাপেক্ষ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সমস্যা সমাধানকেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া হয়– ঢাকা কলেজ, ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার আট বছর পরে এসে এখন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারের ওই সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, তা আট বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট বুঝা যায়। একদিকে ধুলো ময়লায় মলিন ও জরাজীর্ণ, অন্যদিকে নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। তাই ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষায় জোড়াতালিই ভরসা।
যখন অধিভুক্ত সাত কলেজের ২২-২৩ সেশনের পরীক্ষা শুরুর খবর নেই, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সেশনের পরীক্ষা শেষে চলছে ফল প্রকাশের আলোচনা। পরীক্ষা হলেও গণহারে ফেল করানো হয় বলে অভিযোগ সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের। এ জন্য তারা দুষছেন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতিকে।
কারণ, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা ক্লাস নিলেও সাত কলেজের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গত দেড় বছরে বিভিন্ন সেশনের দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
তারা বলছেন, ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক, আর প্রশ্ন করা থেকে খাতা দেখছেন অন্য শিক্ষক। ফলে আমাদের পড়ার সাথে পরীক্ষার প্রশ্নের মিল কম হয়। ফলে ফেল করার হার বেশি।
তবে, ফলাফল ভোগান্তির পাশাপাশি এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের রয়েছে পরিচয় সংকটও। তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই স্বীকার করেনি আমরা তাদের শিক্ষার্থী। তারা আমাদেরকে স্বীকার করে না। আর তাই এবার দাবি উঠেছে সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করাই একমাত্র সমাধান নয়। শিক্ষার্থীরা যেসব সমস্যার কথা বলছে, সেগুলো আগে সমাধান করা জরুরি। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। নতুন আইন প্রণয়ন, জমি অধিগ্রহণ, প্রকল্প তৈরি ও একনেকে পাস; সব মিলিয়ে তিন-চার বছরের ব্যাপার। এটা করা হলেও বর্তমান শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়ার সুযোগ পাবে না। তাই এই শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো আগে সমাধান করা দরকার।
Leave a Reply