নতুন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনে আলোচনায় যারা!

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাজাতে সার্চ কমিটি প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেয়া হবে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) নাটকীয়ভাবে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেন। এরপর চাউর হয় পুরো কমিশনের পদত্যাগের খবর।

ওইদিন সকালে প্রতিদিনের মতো অফিসে গিয়ে তারা দাপ্তরিক কাজ সারেন। বিকালে তাদের দুদক সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর ১টার দিকে সংস্কার কমিশনের বৈঠক স্থগিতের খবর আসে কমিশনে। কার্যত এর পরই তারা পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।

দুদকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার তাদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়ে অনেকটা নীরবে দুদক কার্যালয় ত্যাগ করেন।

তাদের পদত্যাগের পর নতুন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। দুদক, জনপ্রশাসন ও জুডিসিয়াল সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, নতুন কমিশনে চেয়ারম্যান পদে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভুঁইয়া, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এ এইচ এম নুরুল ইসলাম ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে।

ইকবাল করিম ভূঁইয়া ২০১২ সালে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালের ২৫ জুন সেনাপ্রধান হিসেবে অবসরে যান তিনি। গত জলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।

এ এইচ এম নুরুল ইসলামকে ২০০৪ সালের ৩ জুন বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। তার নামে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সময় মামলাও দায়ের করা হয়। দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথিপত্র তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সিডি আকারে সংরক্ষণ করেছিলেন। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে, পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে দুদক।

মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা বিদেশে অর্থপাচার সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন। কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে তিনি তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধেও দুদকে অনুসন্ধান ছিল। পরে নিষ্পত্তি করা হয়।

দুই কমিশনার পদে দুদকের সাবেক মহাপরিচাক (ডিজি) প্রশাসন ক্যাডারের মুনীর চৌধুরী, জুডিসিয়াল সার্ভিসের মঈদুল ইসলাম, দুদকের নিজস্ব জনবলের আমীরুল আলম, ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নুর আহমেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর নামও আলোচনা হচ্ছে। তাদের মধ্যে মুনীর চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগে। এছাড়া কমিশনের বিশেষ তদন্ত শাখার বর্তমান মহাপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর বাড়িও চট্টগ্রাম।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের পদত্যাগ অপরিহার্য ছিল। যেহেতু তারা সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে পদত্যাগ করেছেন, সেহেতু সরকারের নিশ্চয়ই চিন্তা-ভাবনা আছে নতুন কমিশন কীভাবে গঠন করা হবে।

তিনি বলেন, এটা সর্বজনবিদিত অতীতে কিংবা বতর্মানে যারা ছিলেন তারা দলীয় প্রভাবভুক্ত নিয়োগপ্রাপ্ত, ফলে তারা কখনোই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি। এখন যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বে আছেন, তাই আশা করব অবশ্যই যথাযথ মানদণ্ড বজায় রেখে প্রশাসনিকভাবে দক্ষ ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবেন। যাদের নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে। কোনো ধরনের শূন্যতা তৈরি হওয়ার আগে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *