আদানির বিদ্যুৎ বন্ধের ‌‘আলটিমেটাম’, যা বললেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব!

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপের। এই বকেয়া পরিশোধে আলটিমেটাম দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আদানির বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অনেক টাকা বাকি রেখে গেছে। তবে বাংলাদেশ কোনো একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার কাছে জিম্মি হবে না।

রোববার (৩ নভেম্বর) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন,
দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরাতে অনেক ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে সরকার। আদানির বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার অনেক টাকা বাকি রেখে গেছে। তবে কোনো একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার কাছে বাংলাদেশ জিম্মি হবে না।

প্রেস সচিব বলেন,
বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের আদানি গ্রুপ টাকা পায় এটা সত্য। তাদের পেমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে গতি বাড়িয়েছি। পূর্বের যে বিল বাকি আছে সেটার জন্য মূলত দায়ী পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। তারা বিশাল ফাইল অব বেকলট রেখে গেছে। আদানি গ্রুপকে গত মাসে আমরা ৯ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করেছি। যেটা আগস্ট বা আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। আমাদের তরফ থেকে পেমেন্ট আরও দ্রুত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দেশের রিজার্ভ বাড়া শুরু হয়েছে এ কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো রিজার্ভে হাত না দিয়েই করতে পারছি। পেমেন্ট ৭০০ মিলিয়ন ডলার বাকি আছে। সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দিতে পারব। আমরা কারও দ্বারা পাওয়ার হোস্টেজ (জ্বালানি নির্ভরতা) হব না। নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বছরে ১৬ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টাকা পাচারের এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। কত টাকা পাচার হয়েছে, তা বের করতে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আজ ৩ নভেম্বর অত্যন্ত শোকাবহ একটা দিন। মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় চার নেতার ভূমিকা ছিল অনেক। আমরা তাদের স্মরণ করি। আওয়ামী লীগ তাদের কাজ লুকিয়ে রেখেছিল, মূলত একজনের কৃতিত্ব জাহির করতে। আমরা জাতীয় চার নেতার বিষয়ে অবদান স্বীকার করি।’

শফিকুল আলম আরও বলেন,
জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক বন্ধের ঘটনার নিন্দা জানাই আমরাও। শিল্পকলার প্রধান এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবেন বলে আশা করি।

প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, সরকার কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা সমর্থন করে না। জাতীয় পার্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। সরকার যে কোনো আক্রমণের নিন্দা জানায়।

এদিকে রোববারই (৩ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপের। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার বকেয়া পরিশোধে আলটিমেটাম দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৭ নভেম্বরের মধ্যে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ না করা হলে, বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে আদানি পাওয়ার।

আরও পড়ুন: ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেবে না আদানি

সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩১ অক্টোবর বকেয়া পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে উল্লেখিত শর্ত পূরণ করেনি বিপিডিবি।

বকেয়া পরিশোধে বিলম্বের কারণে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড থেকে গত ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) আদানির গোড্ডা প্ল্যান্ট ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে মাত্র ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। পায়রা, রামপাল ও এসএস পাওয়ার ওয়ানসহ অন্যান্য বড় কারখানাগুলোতেও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন কমে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনটিপিসির যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির বাগেরহাটের রামপাল প্ল্যান্ট এবং এসএস পাওয়ার আই এরইমধ্যে কয়লার ঘাটতির কারণে অর্ধেকেরও কম উৎপাদন করছে।

একটি সূত্রের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, বাংলাদেশ থেকে বকেয়া পরিশোধ খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে, যার ফলে বকেয়া দিন দিন আরও বেড়েছে। সদ্যসমাপ্ত অক্টোবরে আদানি পাওয়ারকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এর আগের মাসগুলোতে ৯০-১০০ মিলিয়ন ডলারের মাসিক বিলের বিপরীতে বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ২০-৫০ মিলিয়ন করে। যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি আদানি। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, দ্রুতই এ বিষয়ে একটি সমাধানে আশাবাদী তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *