জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, আমেরিকার সরকার পরিবর্তনে পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন হয় না, তারা কোনো দলের ওপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশেরও পররাষ্ট্রনীতি এরকম হওয়া উচিত।
একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, জয় মোদিকে বলছে নির্বাচন দেয়ার জন্য। মোদির প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না, কোনো ওয়েস্টের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না। বাংলাদেশ চলবে ছাত্র-জনতার প্রেসক্রিপশনে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুল তলায় গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।
সারজিস আলম বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের মানুষ ও সরকার আমরা মনে করি, হয়তো একটা সরকার চেঞ্জ হয়ে গেল তার সঙ্গে যার ভালো সম্পর্ক, পুরোটা মনে হয় তার কাছে চলে গেল! প্রথম বিশ্বের দেশ এবং অন্যতম পরাশক্তি আমেরিকার মতো দেশ তৃতীয় বিশ্ব বা বাংলাদেশের মতো দেশের কোনো একটি দলের ওপর নির্ভর করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি হিসেবে যে বসে রয়েছেন চুপ্পু সাহেব। তিনি হচ্ছেন ফ্যাসিস্টের দোসর। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এত মানুষের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে যে অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই অভ্যুত্থান রাষ্ট্রের ওই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কোনো ফ্যাসিস্ট খুনির দোসর বসতে পারে না। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের কথা মানুষের মাঝে পৌঁছাতে স্কুল, কলেজ, বাজারে যাচ্ছি, কথা বলছি। আজকে (বুধবার) তেঁতুলিয়া উপজেলার ৪টি স্কুলে ও বিভিন্ন বাজারে গিয়েছি। মানুষদের ২৪শের গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেছি ‘
সারজিস বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলাভিত্তিক পদযাত্রা তেঁতুলিয়া থেকে শুরু হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া, এগিয়ে যাওয়া উপজেলা হওয়া যাবে না। সব উপজেলায় সমান বাজেট দিতে হবে। বৈষম্য করা যাবে না। আর যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে, এবং আগামীতে যারা রাজনীতি করবেন তাদের পরিষ্কার মেসেজ দিতে চাই, মানুষ এখন জনতার প্রতিনিধি খুঁজছে। লুটপাট, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট চালানো অপকর্ম যদি করেন মানুষ আর আপনাদের গ্রহণ করবে না।’
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ প্রীতি কথা টকশোতে শোনা যাচ্ছে। সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও জাতীয় পার্টির প্রতি মায়া কান্না শোনা যাচ্ছে। যা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হচ্ছে। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ সংবিধানকে বাইবেল বা ধর্মগ্রন্থের মতো বাস্তবায়ন করেছে।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়ে হাসনাত বলেন, ‘তিনি গতকাল (মঙ্গলবার) একটি কথা বলেছেন যে, বাবার আগে ছেলে হাঁটলে দেশ শেষ। অর্থাৎ উনি বুঝিয়েছেন অর্থাৎ উনাদের আগে যদি তরুণ প্রজন্ম কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেশকে ধ্বংস করে দেবে। আমি মির্জা আব্বাস সাহেবকে বলতে চাই, আমার বয়স ২৬ বছর। আমার বাবার বয়স ৫২ বছর। উনি (মির্জা আব্বাস) রাজনীতি করেন অন্তত ৫৫ বছর। অর্থাৎ আমার বাবার বয়সের চেয়ে বেশি উনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাতে উনাদের যে ত্যাগ সেটি অন্তত তাৎপর্যপূর্ণ। মির্জা আব্বাস সাহেবের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, উনাদের যে কটাক্ষমূলক বক্তব্য আমাদের প্রজন্মভিত্তিক যে কনফিল্ট, জেনারেশনভিত্তিক কনফিল্ট কিন্তু তৈরি করছে।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা দেখছি, খুনি হাসিনা যে এতিম সন্তানদের দেশে রেখে গিয়েছে তাদের মধ্যে এক ধরনের খুশির আমেজ বিরাজ করছে। আমরা তাদের বলতে চাই আমেরিকায় কে নির্বাচিত হলো, সেটি দিয়ে বাংলাদেশের পলিসি নির্ধারিত হবে না। বাংলাদেশের পলিসি নির্ধারিত হবে আমাদের শহীদ ভাইদের রক্তের যে দায়টি রয়েছে সেই দায় থেকে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, সমন্বয়ক মোকাদ্দেসুর রহমান সানসহ অন্য সমন্বয়ক ও হাসনাত-সারজিসের সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply