হাঁকডাক দিয়েও ট্রাম্পের কাছে কীভাবে ধরাশায়ী হলেন কমলা?

জো বাইডেন নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যাওয়ার পর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হন কমলা হ্যারিস। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে তো বটেই, তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। সবার মাঝে বেশ সাড়াও ফেলেন তিনি। অনেকেরই তাই ধারণা ছিল, প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে কমলাই হবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো।

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের সামনে ছিল বেশ কিছু ইস্যু, যার ওপর ভিত্তি করেই মূলত কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভোটাররা। আর ঠিক সেখানেই চমক দেখিয়েছেন ট্রাম্প।

দেশের অর্থনীতি, অভিবাসন, যুদ্ধ বন্ধসহ বাস্তবভিত্তিক বেশ কিছু সমস্যাকে চিহ্নিত করে প্রচারণা চালান ডোনাল্ড ট্রাম্প। আশ্বাস দেন এসব সংকট সমাধানের। বিপরীতে, গর্ভপাতের অধিকার, গণতন্ত্র রক্ষার মতো প্রতিশ্রুতি ছিল কমলার।

নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন জরিপে বলা হচ্ছিল, গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি সামনে এনে বিপুল সংখ্যক নারী ভোটারের মন জয় করেছেন কমলা। তবে অর্থনীতি গতিশীল করা, বেকারত্ব দূর করাসহ নানা বার্তা দিয়ে পুরুষ ভোটারদের কাছে টেনেছেন ট্রাম্প।

এছাড়া দেশটির তরুণ ভোটারদেরও একটি বড় অংশের সর্মথন পেয়েছেন ট্রাম্প। যেখানে চেষ্টা করেও খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি কমলা।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় ছাড়াও, বৈশ্বিক কিছু বিষয়ও ছিল দেশটির এবারের নির্বাচনের কেন্দ্রে। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংঘাতময় পরিস্থিতি।

বাইডেন প্রশাসনের আমলেই ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে। কারণ, এই সংঘাতের বড় প্রভাব পড়েছে বাণিজ্য ক্ষেত্রেও। যার ফলে অনেকটা স্থবিরও হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি।

এসব বিষয়কে ভালোভাবে নেননি অনেক মার্কিন ভোটার।

ট্রাম্প আগে থেকেই বলে আসছেন যে, তিনি ক্ষমতায় থাকলে এসব যুদ্ধ শুরুই হতো না। এমনকি নির্বাচনী প্রচারেও এ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে সফল হয়েছেন তিনি। দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতিও।

ট্রাম্পের এমন শক্ত অবস্থান মার্কিন মুসলিম ভোটারদের সমর্থন জুগিয়েছে তার পক্ষে। এই ভোটাররা ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন দিয়ে এলেও, এবার তাদের বেশিরভাগই ঝুঁকেছে ট্রাম্পের দিকে।

অন্যদিকে, শেষ মুহূর্তে এসে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। তবে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি আরব-মুসলিম ভোটাররা।

ক্ষোভের কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, কমলা যুদ্ধ বন্ধের কথা বললেও ইসরাইলকে সহায়তা বন্ধের বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। কমলা বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করে যাবেন বলেও অভিযোগ ছিল তাদের।

এদিকে, কমলার হারের পেছনে ভিন্ন এক কারণ তুলে ধরেছেন কিছু বিশ্লেষক।

তাদের দাবি, বাইডেন সরে যাওয়ার পর কমলাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক দলের ‘এলিট শ্রেণির’ নেতারা। অর্থাৎ, দলের ভেতরেও পূর্ণ সমর্থন কমলা পাননি বলে মনে করা হয়।

বিপরীতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির সর্বস্তরের সমর্থন পেয়ে মনোনীত হয়েছিলেন বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, ট্রাম্প মূলত উঠে এসেছেন তার দলের তৃণমূলের সমর্থনের মধ্য দিয়েই। যা তাকে আরও একবার পৌঁছে দিচ্ছে হোয়াইট হাউজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *