যে কারণে চরম বিপাকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা!

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ৫ তারিখের পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বেশির ভাগ নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ আবার পালিয়ে গেছেন বিভিন্ন দেশে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় হাসিনার ফোনালাপ এবং গোপন স্থান থেকে নেতাদের বিবৃতি ও ভিডিও বার্তা আরও বিপাকে ফেলেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

সর্বশেষ গত ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে তা পালনে ব্যর্থ হওয়াতে নেতাকর্মীরা নতুন করে বিপাকে পড়েছেন৷ ১০ তারিখের আগে হাসিনার ফোনালাপ এবং আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে বিভিন্ন সময় গুজব ছড়ানো হয়েছে যা বিশ্বাস করে অনেকেই প্রকাশ্যে এসে বিপাকে পড়েছেন।

একদিকে বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়, অন্য দিকে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোর নেতাকর্মীদের নিশানায়ও পড়ছেন তারা। ১০ নভেম্বর জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, পল্টন এলাকার একাধিক ব্যাক্তিকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে গণপিটুনি দেয় ছাত্র-জনতা। এরপর থেকে আরো আতঙ্ক বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

সম্প্রতি প্রকাশিত অডিও কল রেকর্ডে শোনা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এক কর্মীকে কিছু নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেখানে ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ শহীদ নূর হোসেনের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবিও সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়৷ শেখ হাসিনা জানান, ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিলে বাধা দিলে সেই ছবি যেন ভালো করে তুলে রাখা হয়। তিনি সেই ছবি ট্রাম্পের কাছে পাঠাবেন, কারণ তার ট্রাম্পের সঙ্গে লিঙ্ক আছে।

জানা গেছে, ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই ছাত্র-জনতা জিরো পয়েন্টসহ সম্ভাব্য সব এলাকা দখল করে নেয়। অন্যদিকে, বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল যোগে মহড়া দেয়। এরপর থেকে সাধারণ মানুষও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এতে তীব্র আতঙ্ক কাজ করছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে। ১০ নভেম্বর থেকে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি থানা এলাকা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগশূন্য হয়ে পড়েছে। নতুন করে নেতাকর্মীরা কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাসায়, কেউ গা ঢাকা দিয়েছেন অন্য কোথাও।

কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত না থেকে কেবল তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর প্রবণতা আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে বিধ্বস্ত প্রমাণ করেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতি দলটিকে শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে মতের অমিলের প্রমাণ দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘তৃণমূল কেন, নগর পর্যায়ের নেতারাও কোন কর্মসূচিতে নারাজ। এতে বোঝা যায়, নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি মোটেও ভালোভাবে নেয়নি। এর মাধ্যমে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব আরও বাড়ছে বলে মনে করেন দলটির তৃনমূল নেতাকর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *