হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ ও আলু আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দরের পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করলেও বাড়তি আমদানিকৃত আলুর দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। অন্যদিকে প্রকারভেদে প্রতিকেজি আলুর দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। পেঁয়াজের দাম কমায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও আলুর দাম বাড়ায় বিপাকে বন্দরের পাইকাররা।
বুধবার (২০ নভেম্বর) হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত ইন্দোর জাতের পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা (সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছিল ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা কেজি দরে) আর নতুন জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা (সপ্তাহ খানেক বিক্রি হয়েছিল ৯০ থেকে ৯২ টাকা)। বন্দরে সাউথ জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে (সপ্তাহখানেক বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১০২ টাকা)। অন্যদিকে সপ্তাহখানেক আগে আলু ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৯ টাকা কেজি দরে।
পাইকারি ব্যবসায়ী রাশেদুজ্জামান বলেন,আজ বন্দরে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। আমাদের আড়ত গুলোতে চাহিদা না থাকায় আমরা তেমন একটা পেঁয়াজ কিনছি না যার কারণে দাম কমেছে। তবে আলুর দাম একটু বেশি। দাম কমলে তো আমাদের জন্য ভালো হয়।’
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক নুর আলম বাবু বলেন, ‘পেঁয়াজের আমদানি অনেকটাই বেড়েছে তবে বন্দরে ক্রেতা কমেছে যার কারণে পেঁয়াজের দাম কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।’ দাম আরও কমে আসবে বলে জানান তিনি।
হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১০ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে আর আলু আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে পেঁয়াজ কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে চাহিদামতো সরবরাহ করে থাকি। বর্তমানে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ যেমন কিছুটা বেড়েছে তেমনি আগের তুলনায় দাম কমতে শুরু করেছে। দুই থেকে তিনদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকার মতো কমে গিয়েছে। তিন দিন আগে আমরা যে পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৯৮ থেকে ১০২ টাকা দরে ক্রয় করে মোকামে পাঠিয়েছিলাম, এখন সেই পেঁয়াজ দাম কমে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় নেমেছে। এতে করে আমরা যারা পাইকার রয়েছি তাদের জন্য পেঁয়াজ ক্রয় করায় অনেকটা সুবিধা হয়েছে। পেঁয়াজের দাম কমের কারণে মোকামে পেঁয়াজ ক্রয়ের আদেশ যেমন বেশি আসছে তেমনি আমাদের পুঁজি কম লাগছে। তাই বাড়তি পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। যার কারণে আমাদের আয় খানিকটা বেড়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছেন বন্দরের আমদানিকারকরা। তবে ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে সে দেশের বাজারেই পেঁয়াজের সরবরাহ কম ছিল। তাই দাম বাড়তির দিকে ছিল। এর ফলে বাড়তি দামে আমদানি করতে হওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছিল। সেই সঙ্গে চাহিদা মোতাবেক আমদানি করতে না পারায় দাম ঊর্ধমুখী ছিল। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী ও সরবরাহ কমের কারণে ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার কারণেও দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এমন অবস্থায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান যে শুল্ক ছিল সেটি প্রত্যাহার করে নেয়ায় পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা। এর আগে বন্দর দিয়ে ৫ থেকে ১০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক করে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এতে করে দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। এছাড়াও আমদানিকৃত পেঁয়াজের মান খারাপ হওয়ার কারণে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সামনের দিনে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি আরো বাড়বে।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচাপণ্য তাই ভারত থেকে পেঁয়াজবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশের পর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করলে দ্রুত সেই পেঁয়াজের পরীক্ষণ শুল্কায়ন সম্পন্ন করা হয়। আরোপিত শুল্ক পরিশোধ করা সাপেক্ষে দ্রুত যেন বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে বাজারজাত করতে পারেন সেজন্য সবধরনের ব্যবস্থা রেখেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার বন্দর দিয়ে ৩২টি ট্রাকে ৯৩৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।
Leave a Reply