সিইসির মা-বাবার সব সম্পদ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের গর্বিত সন্তান এ এম এম নাসির উদ্দীন ১৯৬৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে মানবিক বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। সেই সময় তাঁর এ সাফল্যের খবর দ্বীপে পৌঁছেছিল দুদিন পর। বঙ্গোপসাগরের বুকে ভাসমান কুতুবদিয়া দ্বীপের এই মেধাবী সন্তান বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে তাঁকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কুতুবদিয়া দ্বীপে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।

এমন আনন্দঘন মুহূর্তে দ্বীপবাসীর সঙ্গে পুরো কক্সবাজারের মানুষও আনন্দে মেতে ওঠেন। একজন নির্ভীক, নির্লোভ এবং মেধাবী ব্যক্তিকে এই পদে নিয়োগ দেওয়ায় দ্বীপের মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন যে, এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে।

কুতুবদিয়া দ্বীপের আলী আকবর ডেইলের কবি জসিম উদ্দিন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি আজ আনন্দে আত্মহারা। এ এম এম নাসির উদ্দীনের প্রয়াত বাবা তালেব উল্লাহ মাস্টার ছিলেন কুতুবদিয়া আদর্শ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

আর আমার বাবা মফিজুর রহমান ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক। তাদের বন্ধুত্বের কারণে আমার কাছে বহু স্মৃতি রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ১৯৬৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হলে খবরটি দ্বীপে পৌঁছায় দুদিন পর, যখন স্টিমার পত্রিকা নিয়ে দ্বীপে আসে। ফলাফল জানার পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে বড়ঘোপ লঞ্চঘাটে গিয়ে নাসির উদ্দীনকে বরণ করে কাঁধে তুলে নিয়ে আসেন তাঁর বাবা।

নাসির উদ্দীন কুতুবদিয়া হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ভর্তি হন এবং পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়ালেখা করেন। তিনি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর শিক্ষকতাও করেছেন।

কুতুবদিয়া আদর্শ হাই স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন ত্যাগী শিক্ষকের মেধাবী সন্তান আ.ম.ম নাসির উদ্দীন। তিনি সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন মানুষ। তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের হারানো ঐতিহ্য কিছুটা হলেও ফিরবে বলে আমরা আশাবাদী।


নাসির উদ্দীনের ছোট ভাই এবং কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ ন ম শহীদ উদ্দীন ছোটন জানান, তাঁদের পরিবারে ১০ ভাইবোন। মা-বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তাঁরা কেউই ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করেন না। সব সম্পদ বিক্রি করে গঠন করা হয়েছে ‘মাস্টার তালেব উল্লাহ-জান্নাত আরা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে স্কুল, মসজিদ, হাফেজখানা এবং নুরানি একাডেমি পরিচালিত হচ্ছে।

মৌলভী পাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘মাস্টার তালেব উল্লাহ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। এসব প্রতিষ্ঠান তাঁদের মা-বাবার আদর্শ এবং ত্যাগের প্রতীক হিসেবে সমাজের জন্য সেবা প্রদান করছে।

এমন একজন মেধাবী, সৎ এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ায় দ্বীপবাসী সহ পুরো দেশের মানুষের মধ্যে এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *