তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে—ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্য চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে বিশ্বজুড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উত্তর কোরিয়ার উগ্র আচরণ এবং বিশ্বশক্তিগুলোর উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থান অনেকেই ভাবতে বাধ্য করছে যে আমরা কি সত্যিই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দোরগোড়ায়? এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠে, কোন দেশগুলো এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়বে আর কোন দেশগুলো তুলনামূলক নিরাপদ থাকবে। বাংলাদেশের অবস্থানই বা কোথায়?
আইসল্যান্ড
গ্লোবাল পিস ইনডেক্সের তথ্যানুসারে, আইসল্যান্ড তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রেও বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর কারণ দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত আইসল্যান্ড ন্যাটোর সদস্য হলেও এর কোনো নিজস্ব সেনাবাহিনী নেই। ফলে যুদ্ধের উত্তাপ সেখানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা একেবারেই কম।
নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যুদ্ধের উত্তাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। এটি গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে বিশ্বের দ্বিতীয় শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত। রাশিয়া ও আমেরিকার মতো যুদ্ধশক্তির প্রভাব থেকে অনেক দূরে থাকায় এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেও নিরাপদ থাকতে পারে।
গ্রিনল্যান্ড (ডেনমার্ক)
ডেনমার্ক পুরোপুরি নিরাপদ নয়, তবে এর অংশ গ্রিনল্যান্ড তুলনামূলক নিরাপদ। গ্রিনল্যান্ডের নিজস্ব কোনো সামরিক বা ক্ষমতার লড়াই নেই এবং এটি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি থেকে বেশ দূরে অবস্থিত। ফলে সেখানে যুদ্ধের প্রভাব পৌঁছানোর সম্ভাবনা খুবই কম।
আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ডের পাশের দেশ হলেও ন্যাটোর সদস্য নয়। তবে এটি ব্রিটেনের সান্নিধ্যে থাকায় ব্রিটেন নিরাপদ থাকলে আয়ারল্যান্ডও তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারে। তবে ইউরোপ, রাশিয়া, আমেরিকা, চীন, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ব্রিটেনের নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।
কানাডা
গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে কানাডা অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশ। আমেরিকার পাশের দেশ হওয়ায় যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকলেও কানাডার নিরপেক্ষ অবস্থান এবং শান্তিপূর্ণ নীতির কারণে এটি তুলনামূলক নিরাপদ থাকতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া ন্যাটোর সদস্য না হলেও এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে দেশটি জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকলেও ভৌগোলিকভাবে এটি তুলনামূলক নিরাপদ। তাসমান সাগর এবং দূরবর্তী অবস্থান এর ভূখণ্ডকে হামলার বাইরে রাখতে পারে।
বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশ একটি ভৌগোলিকভাবে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশ হলেও কোনো সামরিক জোটে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ভারত ও চীনের মতো শক্তিশালী দেশের প্রতিবেশী হওয়ায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নির্ভর করবে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর অবস্থানের ওপর। যুদ্ধ শুরু হলে এশিয়ার প্রভাবশালী দেশগুলো সংক্ষিপ্ত হলেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তবে সামরিক সংঘাতে সরাসরি জড়ানোর সম্ভাবনা কম।
বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনায় মূল বিষয়
যে দেশগুলো নিরাপদ থাকবে, সেগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান, যুদ্ধনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাত্রা বড় ভূমিকা পালন করবে। তবে যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র সবসময় অনিশ্চিত এবং তা নির্ভর করে বৈশ্বিক পরিস্থতির গতিপথের ওপর।
Leave a Reply