বিদ্যুতায়িত হয়ে ছটফট করতে থাকা বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে একসঙ্গেই প্রাণ হারালো দুই বন্ধু। মুহূর্তেই বনভোজনের আনন্দযাত্রা রূপ নিলো বিষাদে। শেষ হয়ে গেল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নও। ছেলের অকাল মৃত্যুতে দুই পরিবারেই চলছে শোকের আহাজারি।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের স্থানীয় চায়না কারখানার সামনে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের বনভোজনের দ্বিতল বাস বিদ্যুতায়িত হয়। এ ঘটনায় তিনজন শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ১০ জন।
মৃত দুই বন্ধুর একজন জোবায়ের আলম সাকিব। তিনি রাজশাহী পবা উপজেলার মুরারীপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। সাকিব ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’র মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বাসটিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের বরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. মুহতাশিম মাশফি বলেন, আমরা পিকনিক স্পটে পৌঁছে যাওয়ার ৩০ মিনিট পর দুর্ঘটনার খবর পাই। শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে পেরেছি, বাসটি হেলে যাচ্ছিল। ওই সময় পাশের বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে চলে আসে বাসটি। ওই সময় মুবতাছিন রহমান মাহিন দোতলায় তার বন্ধুর ব্যাগ আনতে যাচ্ছিল। এ সময় গেটের হাতলের কাছে যেতেই প্রথম বিদ্যুতায়িত হন তিনি। বন্ধু ছটফট করছে দেখে নিজের সিট থেকে দৌঁড়ে যান জোবায়ের আলম সাকিব। তিনি বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এ সময় জোবায়ের আলম সাকিবও বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে দুজনেই মারা যান।
তাদের দু’জনের সহপাঠীরা জানান, তারা একই বাসে ছিলেন। চোখের পলকে দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল। এই বন্ধুদের সঙ্গে গতকাল রাত ২টা পর্যন্ত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন তারা। বাসে নাচানাচি করে পিকনিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এ ঘটনায় সব আনন্দ শেষ হয়ে গেল। সেই মুহূর্ত বর্ণনা করার মতো নয়। তিন বন্ধুর শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।
এদিকে, মৃত্যুর খবরে জোবায়ের আলম সাকিবের বাড়িতে কান্না ও আহাজারির রোল পড়েছে। ব্যাংকার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ও মুরারীপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেফালি বেগমের একমাত্র ছেলে সন্তান সাকিব।
সকালে মৃত্যুর খবর শোনার পরপরই তার বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়রা ময়মনসিংহ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা-মা।
শনিবার সন্ধ্যায় সাবিকের বাড়িতে দেখা যায়, তাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনরাও ভিড় করেছেন। কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। লাশের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন স্বজনরা।
সাকিবের স্বজনরা জানান, সাকিব খুবই নম্র ও ভদ্র স্বভাবের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান সাবিক। বাবা-মা সাধারণত তাকে একা কখনোই ছাড়তো না। শিক্ষকদের সঙ্গে পিকনিকে যাবে এ কারণেই পরিবার থেকে অনুমতি দিয়েছিল। রাতেও ফোনে সাকিবের সঙ্গে তার মা কথা বলেছেন। সে সময়েও হাসিমুখে কথা বলেছেন সাকিব। কিন্তু কে জানতো সকালে মৃত্যুর খবর আসবে। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
Leave a Reply