এই ৪টি বড় কারণেই সেমিফাইনাল মিস, বাংলাদেশ হারাল জয়ের সুযোগ!

লক্ষ্য ১১৬ রান। আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে আটকে দিয়ে পুরো টুর্নামেন্টের মতোই বোলাররা তাদের কাজটা আজও করেছিল ঠিকঠাকভাবে। সেন্ট ভিনসেন্টের আজকের উইকেটে ২০ ওভারে এই রান করাটা সহজ। তবে সেমিফাইনালে যেতে হলে বাংলাদেশকে এই রান টপকাতে হতো ১২.১ ওভারে।

ওভারপ্রতি তুলতে হতো ৯.৫৭ রান। টি-টোয়েন্টি আর টি-টেনের ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটের এই সময়ে এটাকে কঠিন বলবেন কি না, সেই ভার পাঠকের হাতেই ছেড়ে দেওয়া ভালো। শুধু এই তথ্যটা দেওয়া যেতে পারে যে সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেট আজ তুলনামূলক ভালোই ছিল। বিশেষ করে বৃষ্টির পরে। মানে উইকেটে এমন আহামরি কিছু ছিল না, যার কারণে এই সমীকরণ মেলানো যাবে না! ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুলও বলেছেন, ‘বৃষ্টির পর বলও খুব ভালোভাবে ব্যাটে আসছিল।’

সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগটা যে খুব একটা কঠিন ছিল না, সেটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আশা জাগিয়ে প্রমাণও করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ব্যাটসম্যানরাই আবার এলোমেলো আর অদ্ভুত ধরনের ব্যাটিং করে সব আশার জলাঞ্জলি দিয়েছে। দেখে নেওয়া যেতে পারে, কোথায় আর কোন ভুলে আটকে গেল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে তো যেতে পারলই না, শেষ পর্যন্ত হারল ৮ রানে।

ওপেনিংয়ে লিটন-সৌম্য কেন নয়
৭৩ বলে ১১৬ রান করার সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল পাওয়ার প্লেতে দ্রুত রান তোলা। প্রথম ৬ ওভারে ৬৫ থেকে ৭০ রান হয়ে গেলে যেকোনো কিছুই হতে পারত। এই কাজটা করতে দলে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সেরা বিকল্প ছিল সৌম্য-লিটন। হ্যাঁ, দুজনের কেউই ছন্দে নেই। ছন্দের কথা বললে অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন আসতে পারে।

লিটন–তানজিদে শুরু করেছিল বাংলাদেশ
তাওহিদ হৃদয়ের নামটা সরিয়ে রাখলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানই বা ছন্দে আছেন? তাই ছন্দে থাকা না থাকা বিষয় নয়, প্রশ্ন হচ্ছে সামর্থ্যের। সামর্থ্যের বিচারেই এগিয়ে ছিলেন এই দুজন। হতে পারত লিটনের সঙ্গে সৌম্যকে ওপেনিংয়ে পাঠালে শুরুতেই ফিরতেন তিনি। এমনটা তো প্রতিদিনই হচ্ছে। লিটনের সঙ্গী হিসেবে নামা তানজিদ তো গত ৪ ম্যাচের মধ্য তিনবারই আউট হয়েছেন শূন্য রানে।

তাওহিদ হৃদয় কেন এত পরে
প্যাড পরে শুরু থেকেই প্রস্তুত হয়ে ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। তবে ব্যাটিংয়ে এলেন ৪ উইকেট পড়ার পর, মানে ৬ নম্বরে। ততক্ষণে সেমিফাইনালের লক্ষ্য অনেকটাই হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত রান তুলতে হবে, এমন কৌশলের দিনেও হৃদয়ের আগে ব্যাটিংয়ে এসেছেন নাজমুল হোসেন, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার। কেন? আসলে টিপিক্যাল ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় ধরে রাখার চিন্তা থেকে।

শুরুতে তানজিদের জায়গায় লিটন আউট হলে বোধ হয় হৃদয়ই আগে আসতেন। শুধু ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় ধরে রাখার জন্য ছন্দে থাকা একমাত্র ব্যাটসম্যানকে এত দেরিতে উইকেট এনে কি ভুল করেনি বাংলাদেশ? হৃদয় উইকেট এসেই কিন্তু তাঁর মতো চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেছেন। জীবন পেয়েছেন, ব্যাট চালানো থামাননি। জানিয়ে রাখতে হচ্ছে, সর্বশেষ বিপিএলে তিন নম্বরে খেলেই প্রায় ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ৪০০ এর বেশি রান করেছিলেন হৃদয়।

স্পিনারদের বিপক্ষে হৃদয় এসে শেষে ব্যাট চালাবেন, এমন ভাবনাও যদি দলের থেকে থাকত, তাহলেও শুরুতে পেসারদের আক্রমণ করলে হৃদয়ের সামনেই স্পিনারদের নিয়ে আসতে বাধ্য হতেন রশিদ। কারণ, রশিদদের সমীকরণ ৭৩ বলের নয়, ১২০ বলের ছিল। সেমিফাইনালে যেতে হলে তাদের জিততেই হতো। এত কম রানের লক্ষ্য দিয়ে জয় পেতে হলে লাগত উইকেট। আসলে যেকোনো বিচারেই ৭৩ বলে ১১৬ রানের সমীকরণে হৃদয়ের আগে নাজমুল ও সাকিবের উইকেটে যাওয়া দৃষ্টিকটুই লাগে।

মাহমুদউল্লাহর অদ্ভুত কৌশল
মাহমুদউল্লাহ কী করতে চেয়েছেন, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তিনি যখন ব্যাটিংয়ে ছিলেন, সেমিফাইনালে যেতে হলে ১৯ বলে রান লাগত ৪৩। বোলিংয়ে এলেন আফগানিস্তানের স্পিনার নূর আহমেদ। তরুণ এই স্পিনারের বিপক্ষে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ খেললেন ৫টি ডট বল। একটি বাউন্ডারি পান ওভারের তৃতীয় বলে। ১৯ বলে ৪৩ রানের সমীকরণ হয়ে যায় ১৩ বলে ৩৯ রানের।

মাহমুদউল্লাহ চার মেরেছেন বলে বোলার নূরের এই হতাশা। তবে ওভারের বাকি ৫টি বল ডট দিয়ে নূরকেই জিতিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহমাহমুদউল্লাহ চার মেরেছেন বলে বোলার নূরের এই হতাশা। তবে ওভারের বাকি ৫টি বল ডট দিয়ে নূরকেই জিতিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ

তখন ব্যাট না চালিয়ে মাহমুদউল্লাহ রশিদকে স্লগ খেলতে চাইলেন, যখন সেমিফাইনালের লক্ষ্যটা অসম্ভব হয়ে গেছে-৯ বলে ৩৬ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। সেই স্লগও ঠিকঠাক করতে পারলেন কই! ফিরেছেন বটম-এজড হয়ে। মাহমুদউল্লাহর এমন কৌশলে ধারাভাষ্যকারদেরও বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

প্রশ্ন আছে লিটনকে নিয়েও…
সেমিফাইনালের আশা শেষ। তখন কোনোমতে একটা জয় নিয়ে ফেরার দিকে চোখ বাংলাদেশের। ১২ বলে প্রয়োজন ১২ রান, হাতে ২ উইকেট। উইকেটে আছেন ৪২ বলে অপরাজিত ৫৭ রান করা লিটন। লিটন ১৮ তম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে তাসকিন আহমেদকে স্ট্রাইক দিলেন। এরপর তাসকিনের সঙ্গে তিনি প্রান্ত বদল করেছেন আরও দুবার। এই উইকেটে স্ট্রাইক নিয়ে ৯ বলে ৯ রান করার সাহসটুকু লিটন দেখাতে পারেননি।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যের অভাব আর টিম ম্যানেজমেন্টের ভুল কৌশলের পরও কৃতিত্ব দিতে হবে আফগানিস্তানকে। ১৬ বছর আগেও ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের পঞ্চম বিভাগে খেলা আফগানিস্তান উঠেছে সেমিফাইনালে। তখন আফগানদের খেলতে হতো জাপান, সিঙ্গাপুরের মতো দলের সঙ্গে। এখন সেমিফাইনালে রশিদের দল খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *