৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। কিন্তু এর কয়েক মাসের ব্যবধানে কিছুটা ফাটল দেখা দেয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যের মধ্যে। কিছু ক্ষেত্রে দূরত্ব দেখা দেয় স্বৈরাচার মুক্ত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও।
এই সুযোগে একটার পর একটা ষড়যন্ত্র করে দেশকে অভ্যন্তরীণভাবে অস্থিতিশীল করে রেখেছিল ফ্যাসিবাদের দোসররা। ছাত্র-জনতার সরকারকে উৎখাতে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানার মত নিকৃষ্ট ট্রাম কার্ডটিও খেলে ফেলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা। ‘প্রভু দেশ’ ভারতকে দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে থকে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে তারা। কিন্তু দিনশেষে হতাশ হতে হল দেশবিরোধী কুচক্রীমহলকে।
আজ সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ। পতিত দেশবিধ্বংসী স্বৈরাচার ও আগ্রাসী ভারতকে হতাশ করে শক্তিশালী জাতি উপহার দিতে এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রশংসায় ভাসছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। এমনকি যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, দেশপ্রেমিক সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও এই ঐক্যের পতাকাতলে হাজির হচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে জাতীয় ঐক্যের সংলাপে অংশ নেয় দেশের ডান বাম সকল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইসলামী দলগুলোর নেতা থেকে শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারাও উপস্থিত হয়েছিলেন।
সংলাপে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট। এতে আর অংশ নেয় নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ সংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, এনপিপি, বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি।
এরআগে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান নিয়ে গত মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এ বৈঠক হবে। এতে সরকারের উপদেষ্টারা অংশ নেবেন।
এদিকে, বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য আলোচনা সভায় দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ, ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রসংসদ চালু, রাজনীতিতে ফ্যাসিস্ট কালচার মূলোচ্ছেদসহ দেশের সংকট নিরসনে নানা বিষয়ে ঐক্যমতের ঘোষণা করেন বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ১২টি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোটের আয়োজনে বিজ্ঞান অনুষদ চত্ত্বরে ‘বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেওয়ার আগেই ভারতের সংবাদমাধ্যম এনিডিটিভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে চারদিকে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমার, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিমবঙ্গ সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা।
ড. ইউনূসের এই হুঁশিয়ারি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি আওয়ামী লীগকে সেবা দাস বানিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশকে শোষণ করা ভারত। এবার সরকার গঠনের তিন মাসের মাথায় সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নয়াদিল্লিকে এক কড়া বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও ভারত যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন তাদের হতাশ হতেই হবে বলে মনে করেন দেশ প্রেমিক জনতা।
নেটিজেনরা বলছেন, ষড়যন্ত্র যত বেশি হবে ঐক্য তত মজবুত হবে ইনশাআল্লাহ। যুগ যুগে সত্য জয়লাভ করে আর মিথ্যা পরাজিত হয়। দেশটা আমাদের সবার। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যে জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করছে, যে দেশে আবু সাঈদ, মুগ্ধদের জন্ম হয়, যে জাতি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বুলেটের সামনে নিরস্ত্র অবস্থায় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, সেই জাতিকে দেশি-বিদেশি কোনো অপশক্তি পদানত করতে পারবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের হারানোর কিছু নেই। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো ত্যাগ শিকারে জাতি প্রস্তুত।
ফেসবুকে একজন লিখেছেন, বিদেশী আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদমুক্ত স্বাধীন-সার্বভৌম মর্যাদার উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গাড়তে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। একটা দেশ যখন দীর্ঘদিনের বিদেশি আধিপত্য, প্রভূত্ব এবং গেড়েবসা ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে মুক্তি খুজতে চায়, তখন জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই সেই মুক্তি অর্জন করতে হয় এবং জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই সেই মুক্তি বা স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে হয়।
অনৈক্যের ফলে একটা সদ্য স্বাধীন দেশ কেমন ঝুঁকিতে পরে বা কিভাবে স্বাধীনতা ছিনতাই হয়, সেটা আমরা ৭২-৭৫ এ দেখেছি। ২৪ এর বিপ্লব ও অভ্যুত্থান এর ফলে যে নতুন স্বাধীনতা সেটা যেন আর ছিনতাই না হয়, বিকৃত না হয় এবং বাংলাদেশ একটি স্বকীয় উন্নত মর্যাদা নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সে জন্য আমাদেরকে দল-মত-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশ জাতীয়তার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আজকের এই জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি অটুট থাক। বাংলাদেশ নতুন ও মজবুত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠুক। এবং চিরকাল অটুট বন্ধনে এক হয়ে থাক, সেই প্রত্যাশা রাখি।
Leave a Reply