শেখ হাসিনার বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় ৩ আগস্ট!

‘সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করবে না’ ৩ আগস্ট সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এ কথা জানিয়ে দেয়ার পরই মূলত শেখ হাসিনার রাজত্বের বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল। আন্দোলন পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও ফিডব্যাক নিতে ওইদিন সেনাসদরে বিভিন্নস্তরের সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে সেনাপ্রধান মতবিনিময় করেন। দেশের অন্যান্য ফরমেশনের কর্মকর্তারাও ভার্চুয়ালি ওই সভায় যোগ দেন। শুরুতে আধাঘণ্টার একটি উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন সেনাপ্রধান।

তিনি সরকারের নির্দেশনায় সিভিল প্রশাসনের সহায়তায় কেন সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করেন। সভায় তিনি এ কথাও বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৯৭০ সালের পর এমন গণবিক্ষোভ আর কখনো হয়নি। তাই আমাদের এই পরিস্থিতি ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর উপস্থিত কর্মকর্তাদের বক্তব্য আহ্বান করা হয়। বক্তব্যের জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং এর চেয়ে ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা হাত তুললেও সেনাপ্রধান তরুণ কর্মকর্তাদের কথা শুনতে চান। সভায় সেদিন ছয় থেকে সাতজন কর্মকর্তা নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন।

রাজশাহীর একজন নারী সেনাকর্মকর্তা বাংলায় আবেগপূর্ণ ভাষায় বলেন, দেশের সব মাকে মৃত্যু স্পর্শ করেছে এবং সব মা কাঁদছেন। তিনি মীর মুগ্ধর প্রতিবেশী ছিলেন, যে মুগ্ধ ঢাকার উত্তরায় ছাত্রমিছিলে পানি বিতরণ করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেন। নারী কর্মকর্তা মেজর হাজেরা জাহান এ ঘটনায় শিশুদের প্রাণহানি ও এর ন্যায্য বিচার হওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি সেনাবাহিনীর ওপরও অসন্তোষ বাড়তে থাকা নিয়ে উদ্বেগ জানান। সেনাপ্রধান তার মনোভাবের সঙ্গে একমত হন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি গুলির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ক্যাপ্টেন বর্ণনা করেন সেদিন কীভাবে কর্তব্যরত সেনাসদস্যদের জনতা ঘিরে ধরেছিল এবং তিনি পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে সমালোচিত হয়েছিলেন।

তেমনি সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের সমর্থন কমে যাওয়ার কথা তুলে ধরে সেনাসদস্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন পাঁচ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মাহবুব। এ ধরনের বেশ কিছু বক্তব্য সভায় আসে।

সেনাপ্রধান কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনার পর সিদ্ধান্ত দেন, যে কোনো উসকানিতেও সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করবে না। শিক্ষার্থীদের মিছিলকে প্রতিহত কিংবা বাধা দেবে না। মিছিল চলাকালে সেনাসদস্যরা বরং সরে গিয়ে তাদের জায়গা করে দেবে।

সেনাপ্রধান সভার এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে দেন। এ সিদ্ধান্তে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ হন। ৪ আগস্ট রাওয়া ক্লাবে অনুষ্ঠিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বৈঠকটিও ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ওই বৈঠকে সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল নূরউদ্দিনসহ কয়েকজন সাবেক সেনাপ্রধান উপস্থিত ছিলেন। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে সেদিন মিছিলও করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *