অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ২০ জন উপদেষ্টার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন দাবি জানিয়ে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, যা মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তথ্য যাচাইকারী জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ। তাদের অনুসন্ধানে জান যায়, ভিডিওটি ভুয়া।
ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ২০ জন উপদেষ্টার ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেননি বরং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ফুটেজ ব্যবহার করে ভিডিও তৈরির মাধ্যমে ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটির কিছু অংশের রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সাংবাদিক মাসুদ কামালের ইউটিউব চ্যানেল ‘কথা’তে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসবে কি না, বিষয়ে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির কিছু অংশের মিল রয়েছে। মূলত ওই ভিডিওর কয়েকটি অংশ সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, ভিডিও পর্যবেক্ষণ করা দেখা যায়, ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমের ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ কেমন হতে পারে এবং এই ইস্যুতে ভারতের দেশি ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাগরিকদের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তবে সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের ২০ জন উপদেষ্টাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।
একই সঙ্গে ভিডিওতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির অনলাইন সংস্করণ থেকে গত ১৬ নভেম্বরের একটি প্রতিবেদন আংশিক পাঠ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ করে এতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভারতীয়দের বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে উল্লেখ আছে, কিন্তু এতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তা ছাড়া আলোচিত ভিডিওতে ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইট বার্তার উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু যাচাই করে জানা গেছে, টুইট বার্তাটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়নি। এটি তার নাম ব্যবহার করে পরিচালিত একটি ফ্যান অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও এক্স অ্যাকাউন্ট যাচাই করা হয় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। কিন্তু সেখানে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো পোস্ট বা তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানায় তারা।
তা ছাড়া জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ড. ইউনূসসহ ২০ জন উপদেষ্টার ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি বলেছে তারা।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার দাবিটি যৌক্তিক নয়। সুতরাং, ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
Leave a Reply