মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা!

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে লাঞ্ছিত করেছে স্থানীয়রা। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তারা। মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের দাবি, যারা লাঞ্ছিত করেছে তাদের সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী।

রাতে জুতার মালা ও এলাকায় থেকে ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়ার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তারুজ্জামান।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যারা লাঞ্ছিত করেছে তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আবদুল হাই কানুর বয়স ৭৮ বছর।

তিনি ঘটনাস্থলের পাশের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। তাকে ফেনীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাবেক এমপি মুজিবুল হকের রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকায় যেতে পারেননি তিনি। তার বাড়িঘরে হামলা করাসহ একাধিক মামলা দেওয়া হয়। রবিবার দুপুরে বাড়ির পাশের গ্রামে তাকে একা পেয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় স্থানীয় অন্তত ২০ জন লোক।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জামায়াত সমর্থক আবুল হাসেমের নেতৃত্বে আবুল হাশেম, অহিদুর রহমান, পেয়ার আহমেদ, রাসেলসহ ১৫-১২ জন কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে এলাকা থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দিচ্ছেন। এ সময় তিনি জুতার মালা সরিয়ে এলাকায় থাকার আকুতি জানালেও তাকে এলাকা ছাড়তে হুমকি দিতে থাকে তারা।

যারা তাকে লাঞ্ছিত করেছে তাদের একজনই ঘটনার ভিডিও করে।

ওই ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধাকে বলতে থাকেন, ‘আপনি গ্রামের সবার কাছে মাফ চাইতে পারবেন।’ তখন মুক্তিযোদ্ধা দুই হাত ওপরে তুলে মাফ চাইতে থাকে।

নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। আমি বিগত সময়ে তাদের কোনো ক্ষতি করিনি৷ হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে জুতার মালা গালায় দিয়ে ভিডিও করেন তারা। বিচার কার কাছে চাইব, মামলা দিয়ে আর কী হবে। এমন বাংলাদেশের জন্যই কি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম?’

ওসি বলেন, ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাকে অবগত করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ করবেন না বলেও জানান। রাতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় আবারও তাকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দেবেন কি না বিষয়টি এখনো বলা যাচ্ছে না। ঘটনায় জড়িতদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে৷ জামায়াতের কেউ জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *