পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজে অ*স্ত্র নিয়ে যা জানা যাচ্ছে!

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসা আরেকটি কার্গো জাহাজের ৮২৫টি একক কন্টেইনারের অন্তত তিনটি কন্টেইনারে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল এবং অস্ত্র রয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স ও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে।

এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে পাকিস্তানের করাচি থেকে আসা উক্ত জাহাজে করে ৮০০ কন্টেইনার অস্ত্র এসেছে শীর্ষক দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে কনটেইনার পণ্য নিয়ে নির্ধারিত সময়ের এক দিন পর ২১ ডিসেম্বর ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ নামের একটি কনটেইনার জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছেছে। তবে, জাহাজটিতে করে রাইফেল ও অস্ত্র আনা হয়নি বরং পরিশোধিত চিনি, ডলোমাইড, সোডা অ্যাশ, কাপড়ের রোল, লোহার টুকরা, রেজিন, থ্রি–পিস ইত্যাদি পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২১ ডিসেম্বর ‘পাকিস্তান থেকে সেই জাহাজে এবার যা যা এলো’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে কনটেইনার পণ্য নিয়ে নির্ধারিত সময়ের এক দিন পর শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল পাঁচটার দিকে দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ নামের জাহাজ। পাকিস্তান থেকে এবার সবচেয়ে বেশি এসেছে পরিশোধিত চিনি। মোট ২৮৫ কনটেইনারে ১ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ ব্যাগ চিনি আনা হয়েছে। চিনির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টন। চিনির পর পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে ডলোমাইট। ডলোমাইট আমদানি হয়েছে ১৭১ কনটেইনারে। পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া আরেকটি পণ্য হলো সোডা অ্যাশ। এই পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩৮ কনটেইনারে।

এছাড়া শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলো এনেছে কাপড়ের রোল। মোট ৪৬টি কনটেইনারে রয়েছে কাপড়ের রোল। আলু আমদানি হয়েছে ১৮ একক কনটেইনারে। এ ছাড়া জয়পুরহাটের পিঅ্যান্ডপি ট্রেডিং ২০ কনটেইনারে আখের গুড় এনেছে। এসব পণ্যের পাশাপাশি পুরোনো লোহার টুকরা, রেজিন, থ্রি–পিস ইত্যাদি পণ্য আমদানি হয়েছে। পাকিস্তান ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে পণ্য। আমিরাত থেকে আনা হয়েছে খাদ্যপণ্য, খেজুর, লুব অয়েল, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি। পাকিস্তানের পাশাপাশি আমিরাত থেকেও ১০ কনটেইনার চিনি আমদানি হয়েছে। তবে, প্রতিবেদনটিতে অস্ত্র আমদানির বিষয়ে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

একই বিষয়ে ২১ ডিসেম্বর অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে ‘ফের জাহাজ এলো পাকিস্তান থেকে, এবার রয়েছে যেসব পণ্য’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাহাজটি প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তানের করাচি বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই সময় জাহাজটিতে বাংলাদেশের জন্য নেয়া হয় ১১৩ টিইইউস কনটেইনার। এরপর বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তানের করাচি থেকে জাহাজে তোলা হয় আরো ৬৯৮ টিইইউস কনটেইনার। এর মধ্যে ২৮৫ টিইইউস কনটেইনারে রয়েছে পরিশোধিত চিনি, ১৭১ টিইইউস কনটেইনারে ডলোমাইট, ১৩৮ টিইইউস কনটেইনারে সোডা অ্যাশ, ৪৬ টিইইউস কনটেইনারে কাপড়ের রোল, ২০ টিইইউস কনটেইনারে আখের গুড়, ১৮ টিইইউস কনটেইনারে আলু এবং ২০ টিইইউস কনটেইনারে পুরোনো লোহার টুকরা, রেজিন ও কাপড় রয়েছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা কনটেইনাগুলোতে চিনি, খেজুর, লুব অয়েল ও কিছু খাদ্যপণ্য রয়েছে।

উক্ত প্রতিবেদনটিতেও অস্ত্রের বিষয়ে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও জাহাজটিতে করে অস্ত্র আমদানির বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, পাকিস্তানের করাচি থেকে ৮০০ কন্টেইনার অস্ত্র আনার দাবিটিও প্রথম আলো বা অন্য কোনো গণমাধ্যম কর্তৃক প্রচার করার সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এডিশনাল কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞার সঙ্গে। তিনিও নিশ্চিত করেন, জাহাজটিতে করে অস্ত্র আমদানির দাবিটি ভুয়া।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ যোগাযোগ চালু হয়েছিল গত নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রথমবার ৩৭০ একক কনটেইনার আনা হয় জাহাজটিতে করে। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আনা হয় ২৯৭ একক কনটেইনার, বাকিগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। সেসময়ও চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজটি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্যের ছড়াছড়ির শুরু হলে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজটিতে করে অন্যান্য দ্রব্যের পাশাপাশি রাইফেল ও অস্ত্র আনা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *