যদি ভারত কখনও বাংলাদেশ আক্রমণ করে অথবা দখল করতে আসে, তবে এটি বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিষয়ের উপর নির্ভর করবে যে, কোন দেশ বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে। নিচে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সমর্থনের একটি বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:
১. চীন
চীন বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থনৈতিক ও সামরিক বিনিয়োগ করেছে, যেমন পদ্মা সেতু এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে। কৌশলগতভাবে, বাংলাদেশকে সমর্থন করলে চীন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব মোকাবিলা করতে পারবে। জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক ফোরামে কূটনৈতিক সমর্থন, আর্থিক সাহায্য, এবং সম্ভাব্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ।
২. পাকিস্তান
ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে পাকিস্তান বাংলাদেশকে সমর্থন করতে পারে, যাতে ভারতের কৌশলগত অবস্থান দুর্বল হয়। যদিও পাকিস্তানের সম্পদ সীমিত, তবে তারা প্রতীকী সমর্থন বা সামরিক পরামর্শ দিতে পারে। কূটনৈতিক সমর্থন এবং সীমিত সামরিক সহায়তা, তাদের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
৩. মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ
সৌদি আরব, কাতার এবং তুরস্কের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা বাংলাদেশি কর্মীদের একটি বড় অংশ নিয়োগ করে। তারা বাংলাদেশকে সমর্থন করতে পারে সম্পর্ক আরও জোরদার করার সুযোগ হিসেবে। আর্থিক সাহায্য, আন্তর্জাতিক লবিং, এবং মানবিক সহায়তা।
৪. জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
যেকোনো আক্রমণকে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখবে। জাতিসংঘ এবং বড় শক্তিগুলো শান্তির জন্য চাপ দেবে এবং দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করবে। ভারতের উপর কূটনৈতিক চাপ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ, এবং বাংলাদেশের জন্য মানবিক সহায়তা।
৫. অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তি (রাশিয়া, জাপান ইত্যাদি)
ঐতিহাসিকভাবে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, তবে রাশিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে পারে। তবে ভারতে অতিরিক্ত আধিপত্য দেখলে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে পারে। বাংলাদেশে জাপানের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে এবং তারা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন দিতে পারে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান উৎসাহিত করবে।
৬. আসিয়ান দেশসমূহ
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আসিয়ান দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো নৈতিক বা কূটনৈতিক সমর্থন দিতে পারে। আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থন এবং সম্ভবত মধ্যস্থতার চেষ্টা।
৭. বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শক্তি
বিদেশি সমর্থন ছাড়াও, বাংলাদেশের নিজের কয়েকটি শক্তি রয়েছে যা তাকে এগিয়ে রাখবে:
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম বৃহত্তম অবদানকারী হিসেবে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বিভিন্ন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ।
যেকোনো আক্রমণ দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবে, যা দীর্ঘমেয়াদী দখল কঠিন করে তুলবে। নদী, জলাভূমি এবং ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল যেকোনো আক্রমণকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
ভারত আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে উল্লেখযোগ্য প্রভাবশালী হলেও, বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া উস্কে দেবে। চীন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত সমর্থন বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াবে এবং এর সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করবে।
Leave a Reply