আমাদের জীবনযাত্রা এবং সম্পর্কের গুণমান অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের চারপাশের মানুষের ওপর। কিছু মানুষ তাদের আচরণ এবং মনোভাবের মাধ্যমে সহজেই আমাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে, একটি “নিচুমানের” ব্যক্তি বলতে আমরা এমন কাউকে বুঝি, যাদের আচরণ এবং মনোভাব অন্যদের জন্য ক্ষতিকর বা অস্থিরতা সৃষ্টি করে। একজন বিশেষজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী তাদের কিছু বিশেষ আচরণ চিহ্নিত করেছেন, যা তাদের নিন্মমানের ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।
১. সবসময় অন্যদের দোষ দেয়া
নিচুমানের ব্যক্তিরা তাদের ভুলগুলো কখনোই স্বীকার করতে চান না। তাদের জন্য সবসময় অন্যরা দায়ী। এরা কখনোই নিজেদের কর্মকাণ্ড বা সিদ্ধান্তের জন্য দায়বদ্ধ হতে চান না এবং তা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেন। এতে করে তারা কোনভাবেই আত্মসমালোচনার সুযোগ পান না, যা ব্যক্তিগত উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
২. অনুরোধ করতে ও সাহায্য নিতে সমস্যা
এরা নিজেরাই সব কিছু করতে চান এবং অন্যদের সাহায্য নিতে কষ্ট বোধ করেন। এমনকি যখন তারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হন, তখনও সাহায্য চাওয়ার পরিবর্তে একা সবকিছু সামলানোর চেষ্টা করেন। এতে তাদের মধ্যে অহংকার এবং দুর্বলতার অনুভূতি তৈরি হয়, যা অন্যদের সাথে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. অন্যদের অনুভূতি উপেক্ষা করা
নিন্মমানের ব্যক্তিরা সাধারণত অন্যদের অনুভূতি বা আবেগের প্রতি কোনো ধরনের সহানুভূতি প্রদর্শন করেন না। তারা নিজের স্বার্থে এবং মনোভাবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন, যা অন্যদের ক্ষতি করতে পারে। তাদের জন্য অন্যদের অনুভূতি বা মঙ্গল কখনোই প্রথমে আসে না, এবং এটাই তাদের নষ্ট ব্যক্তিত্বের অন্যতম পরিচায়ক।
৪. অতিরিক্ত দম্ভ ও অহংকার
এই ধরনের মানুষরা নিজেদের বড় মনে করেন এবং অন্যদেরকে ছোট করার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে প্রায়ই অন্যদের প্রতি অসম্মান বা তাচ্ছিল্য প্রকাশিত হয়, যা সামাজিক সম্পর্কের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এরা নিজেদের সাফল্য বা অর্জনের বিষয়ে অতিরিক্ত গর্বিত হন এবং অন্যদের প্রতিভা বা মূল্যায়ন নাও করতে পারেন।
৫. নির্দিষ্ট চিন্তা ও প্যাটার্নের প্রতি অগোচর থাকা
নিন্মমানের ব্যক্তিরা নিজের সীমাবদ্ধতা বা চিন্তা ব্যবস্থার প্রতি অন্ধ থাকতে পারেন। তারা নিজেদের ধারণা বা অভ্যস্ত পদ্ধতিতেই আবদ্ধ থাকে, নতুন কিছু শিখতে বা অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে আগ্রহী নন। তারা নিজের ভুলও দেখতে চান না, আর এর ফলে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
৬. সম্পর্কগুলিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করা
এদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা থাকে না। প্রায়ই তারা সম্পর্কগুলোতে অস্থিরতা বা জটিলতা সৃষ্টি করেন, যার ফলে পরিবার, বন্ধুত্ব বা কর্মক্ষেত্রের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তারা কখনোই সম্পর্ককে নির্ভরযোগ্য এবং স্থিতিশীল রাখতে আগ্রহী হন না।
৭. সবসময় শিকারি মনোভাব পোষণ করা
নিন্মমানের ব্যক্তিরা প্রায়ই জীবনকে একটি যুদ্ধ হিসেবে দেখেন এবং নিজেদেরকে প্রতিকূল পরিবেশে শিকারি হিসেবে ভাবেন। তারা একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দেখেন, আর এই মনোভাবের ফলে তারা সহযোগিতার চেয়ে প্রতিযোগিতা বেশি দেখতে পছন্দ করেন, যা সম্পর্ক এবং কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৮. পরিবর্তন আনার বা উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা না করা
নিন্মমানের মানুষরা কখনোই নিজের উদ্যোগে কিছু করতে চান না বা পরিস্থিতি বদলাতে চেষ্টা করেন না। তারা সাধারণত আক্ষেপ ও অভিযোগ করে বসে থাকেন, কিন্তু নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনার বা উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করেন না। তারা কেবল পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল এবং সৃষ্টিশীলতা ও উদ্যমের অভাব তাদের চরিত্রের একটি বড় দিক।
এই ৮টি আচরণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করলে, আপনি সহজেই একজন নিন্মমানের ব্যক্তির সাথে আপনার সম্পর্ক বা যোগাযোগের মান উন্নত করতে পারবেন এবং আপনার জীবন থেকে এসব নেতিবাচক প্রভাব দূর করতে সক্ষম হবেন।
Leave a Reply