বিষোদগার ও ট্যাগিংয়ের রাজনীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন। মূলত জাতীয় নাগরিক কমিটিকে নিয়ে তার এই ক্ষোভ। দুদিন আগে অনলাইন লাইভ শো ঠিকানায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারীর সঙ্গে বিতণ্ডা হয় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক খালেদের। পরে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে।
এরই প্রসঙ্গ টেনে খালেদ মুহিউদ্দীন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে লাইভ টক শো ঠিকানায় এক প্রশ্নে বৃহস্পতিবার বলেছেন, গত ১৫ বছর যারা সুবিধা নিয়েছে তাদের জায়গায় আপনি নতুন একটি গোষ্ঠী দেখেন যারা কথায় কথায় ফ্যাসিবাদের পক্ষে, জুলাই-আগস্টে কই ছিলেন এমন একটি ট্যাগ দেয়। আমি ডয়চে ভেলে থেকে চলে আসবো সেজন্য বাধ্যতামূলক ছুটি কাটাতে হয়েছে, সেই বাধ্যতামূলক ছুটির মধ্যে সে সময় ২৬ তারিখের মধ্যে চারটি অনুষ্ঠান শেষ করে ক্রোয়েশিয়া গিয়েছি, পরে ১ তারিখে আবার ডয়চে ভেলেতে ফেরত এসেছি। একটা প্রশ্ন করার জন্য ৫টি ট্যাগ আপনি আন্দোলনের সময় কোথায় ছিলেন এবং একই শেখ হাসিনা স্টাইলে এটা সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে আপনি জানেন টেলিভিশনের মধ্যে ঢুকে এই ক’জনকে বাদ দিতে হবে, এ পাঁচ জনকে বাদ দিতে হবে এই কথাও এখন আর বলা যাবে না। এটা কীভাবে দেখেন— আলী রিয়াজকে এমন প্রশ্ন করেন খালেদ।
জবাবে আলী রীয়াজ বলেছেন, সব ঘটনা প্রীতিকর হচ্ছে তা নয়, আমি ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর মধ্যে যাব না, সেটা আপনার বা আমার যারই হোক। কে কোথায় ছিলেন এ ধরনের প্রশ্ন তোলাটাও ঠিক না। প্রশ্নটা হচ্ছে, আপনি যে পরিস্থিতির কথা বলছেন সে পরিস্থিতিটা হচ্ছে- বিভিন্ন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, যেগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ। সেটা উদ্ধেগজনক। তবে আবার একটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন কথা বলতে পারছে। দুই বছর আগে সেটাও বলা যেত না।
এ সময় মুহিউদ্দীন বলেন, আমরা তো বলছি যে, এই প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করতে হবে। এ প্রধানমন্ত্রী সমালোচনার উর্ধ্বে নাকি। একশ বার বলেছি।
পরে আলী রীয়াজ বলেন- বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কি সেই ভূমিকা পালন করেছে?
মুহিউদ্দীন বলেন, রূপপুরে বালিশকাণ্ড, স্বর্ণের মধ্যে খাদ এগুলোতো গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জানতে পেরেছে জনগণ। আমরা এ সরকারের অন্যায় ৫ আগস্টের আগে যা কিছু জানি সেটাতো গণমাধ্যমের কারণেই জানি। গণমাধ্যম শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে তার দায়িত্ব পালন করে নাই। কিন্তু কেউ কেউ তো করেছে। এমন ঢালাও অভিযোগ করা যাবে না যে গণমাধ্যম কিছু করে নাই।
খালেদ মুহিউদ্দীন এ সময় আলী রিয়াজকে বলেন, আপনিওতো বলেছেন। আপনি প্রথম আলোতে কলাম লিখেছেন। অপনি কোনটা লিখেন নাই?
তখন আলী রিয়াজ বলেন-আমার একটা বই আছে অটোক্রাটস রাইজ। যেটা বাংলাদেশের কোনো পাবলিকেশন্সের পক্ষে ছাপা সম্ভব হয়নি। যেটা ম্যাকমিলান থেকে ছাপা হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ভোটিং ইন এ রেজিম যেটা বেলগ্রেড থেকে বের হয়েছে। আপনার কি মনে হয় ঢাকার কোনো পাবলিকেশন্স থেকে ছাপাতে পারতো?
খালেদ বলেন, আপনি কলামে তো লিখছেন, আমরা যখন জিজ্ঞেস করছি আপনি তখন বলছেন।
আলী রিয়াজ বলেন, ফরেন অ্যাফেয়ার্স আমি লিখতে পেরেছি কোয়াইটস লাইক টু টকতেস।
রিয়াজ বলেন, আপনি বলেন তো কোনো পত্রিকায় ছাপাতে পারতো? আপনারা পেরে থাকতে পারেন, আমি পারি নাই। আমাকে লিখে দেখাতে হয়েছে কিভাবে ওয়েপনাইজ করা হয়েছে। এই যে আপনি বলছেন সবাই আপনারা বলতে পারছেন, আপনি যে যুক্তিটা দাঁড় করাতে চেয়েছেন এটা ভয়াবহ যুক্তি। এটা ফ্যাসিজমের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আপনার যুক্তিটা খুই ভয়াবহ যুক্তি। কারণ বাংলাদেশে যখন ২০১৪-১৮ এবং ২৪ সালে নির্বাচন হয়েছে। বলেন তো কয়টা গণমাধ্যম বলেছে এটা হোমপিলিকটিভ ইলেকটিমেট গভর্মেন্ট। আপনি গত বছর অক্টোবর মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার কোন ছবি সংবাদ মাধ্যমের প্রথম পাতায় ছাপেনি? আমি স্টাডি করে দেখিয়েছি কিভাবে স্বার্থের কারণে গণমাধ্যম কি ভূমিকা পালন করছে। ডেইলি স্টারের কলাম লেখার মাধ্যমকে আপনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কিভাবে বলেন?
পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখতে পান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াজ বলেন, পরিবর্তন দেখতো পাই। তবে তার অর্থ এই নয় পরির্তন হান্ডেডে হান্ডেড বা আশি ডিগ্রি হয়ে গেছে বা সব রকম স্বাধীনতা আপনি পাচ্ছেন, তা কিন্ত আমি বলছি না।
যে পরিবর্তনটা দেখতে পাই যে যখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে কে যেন অভিযোগ করছে, তখন কি গোয়েন্দা সংস্থা ছিল না? তখন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে তখন কতটুকু বলতে পেরেছি। সেটা আপনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থার উদ্যোগে কোনো পত্রিকা দখলের ঘটনা ঘটেনি, কোনো টেলিভেশন দখলের ঘটনা ঘটেনি? আপনি কি তখন লিখতে পেরেছেন? আপনি পেরেছেন কি জানি না। কিন্তু আমরা লিখতে পারি নাই। বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যম লিখতে পেরেছে ব্যাংকগুলো গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দ্বারা বন্দুক উঁচিয়ে দখল করা হয়েছে?
Leave a Reply