চীন সফর বাতিল, পদত্যাগের চাপ বাড়ছে টিউলিপের!

যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে এবার তদন্তের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। তার বিরুদ্ধে লন্ডনে একাধিক ফ্ল্যাট বিনামূল্যে গ্রহণ করার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব ফ্ল্যাট তাকে দিয়েছেন তার খালার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি ব্যক্তিরা।

দীর্ঘসময় ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি সে দেশের পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সদস্য ও বর্তমানে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তারও।

জানা গেছে, লন্ডনে সম্পত্তি নিয়ে জালিয়াতির খবর প্রকাশ্যে আসার পর মন্ত্রিত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের আর্থিক দপ্তর। আজ (সোমবার) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের নির্ধারিত চীন সফর বাতিল করা হয়েছে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর নীতি উপদেষ্টার কাছে নিজেকে পেশ করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন টিউলিপ। সে হিসেবে চলতি সপ্তাহে চীনে যাওয়া ট্রেজারি প্রতিনিধি দলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। তবে এখন তিনি যুক্তরাজ্যেই থাকবেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নীতি উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করবেন। লন্ডনে যে দুটি ফ্ল্যাট টিউলিপ বিনামূল্যে পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সে ফ্ল্যাটগুলো কে কখন ব্যবহার করেছে তা খতিয়ে দেখবেন তিনি। এ দুটি ফ্ল্যাটের একটি টিউলিপকে দিয়েছেন তার খালা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। আরেকটি দেওয়া হয় টিউলিপের বোন রুপন্তিকে।

তদন্তে টিউলিপের কাছে এসব সম্পত্তি কিভাবে পেয়েছেন তা জানতে চাওয়া হবে। তিনি যদি সঠিক ব্যখ্যা দিতে না পারেন তবে তার মন্ত্রিত্ব চলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। টিউলিপ বলছেন, এসব সম্পত্তি অবৈধ নয়। তবে কীভাবে এই সম্পত্তি পেয়েছেন সে প্রশ্নে তিনি একেকবার একেক রকম দাবি করেছেন।

শনিবার রাতে ব্রিটেনের টরি এমপিরা দাবি জানিয়ে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক যদি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, তাহলে তার অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। লন্ডনের হ্যারো ইস্টের টরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেন, টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট এবং ব্যাখ্যা করতে হবে, আসলে তিনি কী বলেছিলেন এবং কেন। যদি তিনি তা না করেন, তাহলে মন্ত্রী হিসেবে তার অবস্থান অগ্রহণযোগ্য হবে।

ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছায়ামন্ত্রী ম্যাট ভিকার্স বলেন, সরকারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু সেই সদস্য যখন স্টারমারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী তখন তা আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ।

আর হান্টিংডনের টরি এমপি বেন ওবেস-জেকটি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে নতুন এই তথ্য বেশ উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে ফ্ল্যাটটি উপহার হিসেবে পাওয়া এবং আগের দাবি অনুযায়ী না কেনার বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে আরও কিছু প্রশ্নের জবাব আছে।

উল্লেখ্য, লন্ডনে টিউলিপের বিনা মূল্যে এসব ফ্ল্যাট পাওয়ার খবর এমন সময় প্রকাশ্যে এল, যখন ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মাসে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *