কোনটি বিষাক্ত সাপ চিনবেন কীভাবে, কামড়ালে করণীয় কী, জানালেন চিকিৎসক!

স্বাভাবিকভাবেই বর্ষায় আমাদের দেশে সাপের আনাগোনা বেশ বেড়ে যায়। এ কারণে সবাই কিছুটা উদ্বিগ্ন থাকেন। আবার সম্প্রতি দেশে রাসেলস ভাইপার আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে সবার মনে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মনে নানা ভয়-ভীতি ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

সাপে কাউকে কামড় দিলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আমাদের দেশে সাপের কামড় অধিকাংশই নির্বিষ সাপের কামড় হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আতঙ্কিত হয়ে অনেক রোগী হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। সম্প্রতি সাপের কামড় ও রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক নিয়ে চ্যানেল 24-এর সঙ্গে কথা বলেছেন পাবনার চাটমোহরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফরহাদ পারভেজ লিখন। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।

★ সাপে কামড় দিলে করণীয়:

১. আক্রান্ত ব্যক্তি যেন ভয় না পায়, তাকে আশ্বস্ত করতে হবে। সাহস জোগাতে হবে।
২. কামড় দেয়া স্থানটি Immobilised অর্থাৎ নড়াচড়া যেন বেশি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বেশি নড়াচড়া হলে দ্রুত সাপের বিষ সারাদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩. কামড় দেয়া স্থানে দড়ি বা ফিতা দিয়ে শক্ত করে গিট দেয়া যাবে না।
৪. হাতে কামড় দিলে যদি আংটি বা চুড়ি পরা থাকে, এগুলো খুলে ফেলতে হবে। অনেক সময় বিষক্রিয়ার ফলে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়। তখন চুড়ি, আংটির কারণে সেখানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পচন ধরে।
৫. রোগীর আক্রান্ত স্থানকে Immobilised করে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা জেলা সদর হাসপাতাল অথবা মেডিকেল কলেজে নিতে হবে।
৬. সম্ভব হলে যদি সাপটিকে শনাক্ত করে রাখতে পারেন, তাহলে চিকিৎসা প্রদানে সুবিধা হবে। হাতের কাছে মোবাইল ফোন থাকলে সাপের ছবি তুলে রাখতে পারেন। তবে সাপকে মারার চেষ্টা করে সময় নষ্ট করবেন না।
★ বিষাক্ত সাপের কামড়ের লক্ষণ:

১. বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে দংশন স্থানে চামড়ার রং পরিবর্তন হয়ে অনেক সময় কালচে হয়ে যায়।
২. অনেক সময় কামড় দেয়া স্থান থেকে অনবরত রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
৩. নিদ্রাভাব চলে আসে, চোখের পাতা ভারি হয়ে যায় এবং চোখে ঝাপসা দেখা যায়।
৪. কথা জড়িয়ে যায়, জিবহা ভারী হয়ে আসে, ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়।
৫. ঘাড় ভেঙে আসে।
৬. প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে বা প্রস্রাবের রং কালো হয়ে যায়।

★ সাপে কামড় দিলে যেসব কাজ করা যাবে না:

১. কামড় দেয়া স্থানে ব্লেড দিয়ে কাটা যাবে না।
২. এসিড বা অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া যাবে না।
৩. রোগীকে বিষক্রিয়া নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কবিরাজের পরামর্শে অহেতুক ঝালের গুড়া, কাঁচা মরিচ, লবণ ইত্যাদি খাওয়ানো যাবে না।
৪. বাংলা সিনেমার নায়কের মতো সাপে কাটা স্থানে চুষে বিষ নামানোর চেষ্টা করা যাবে না।
৫. কামড় দেয়া স্থানে শক্ত করে গিট দেয়া যাবে না, এতে আক্রান্তস্থানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে বিষক্রিয়া আরও পচনের সৃষ্টি করতে পারে।
৬. ওঝা, সাপুড়ের কাছে নিয়ে ঝাড়-ফুক করে সময় নষ্ট করা যাবে না।
★ সাপের কামড় এড়িয়ে চলবেন যেভাবে:

১. যেসব স্থানে সাপের উপদ্রুত আছে, সেসব স্থানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
২. মাঠে কাজ করার সময় গামবুট বা প্লাস্টিকের জুতা পড়তে পারেন।
৩. বাড়ির আশপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখুন।
৪. মাটির ঘরে ইঁদুরের গর্ত থাকলে তা বন্ধ করে দিন।
৫. রাতে বা অন্ধকারে চলাচল করার সময় মাটিতে পা বা লাঠি দিয়ে শব্দ করে চলুন।
মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের সব সাপ বিষাক্ত নয়। এ জন্য সব সাপের কামড়ে অ্যান্টিভেনম প্রয়োজন হয় না। আর অ্যান্টিভেনম নিজেও একটি বিষ। তাই নির্বিষ সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়। তবে বিষাক্ত সাপের কামড়ের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। যা বাংলাদেশ সরকার এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেশের প্রায় সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল,
এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথেষ্ট সরবরাহ ও মজুদ আছে। তাই নির্বিষ হোক আর রাসেলস ভাইপারের মতো বিষাক্ত সাপই হোক না কেন, যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে।

হাসপাতালে চিকিৎসক আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিটি প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সঠিক ব্যবহার জীবন বাঁচাবে।

সাপ পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাসেলস ভাইপারসহ সব সাপই ভিতু প্রাণী। নিজে আক্রান্ত না হলে কাউকে কামড় দেয় না। অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে সাপ মারা যাবে না। পৃথিবীতে স্রষ্টার সৃষ্টি সব প্রাণীরই বাঁচার অধিকার আছে। এ জন্য আতঙ্কিত নয়, সচেতন হতে হবে। নিজে বাঁচুন, সাপকেও বাঁচতে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *