শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে কলকাতা ও এর আশপাশের অঞ্চল, বাংলাদেশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে নিউটাউন, পার্ক সার্কাস, এবং চিনার পার্ক এলাকায় বহু নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা বাংলাদেশে নাশকতার পরিকল্পনা করছেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা এবং রাজনৈতিক পুনর্বাসনের পথ তৈরি করা। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘আমার দেশ’।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ফ্ল্যাটে গিয়ে বৈঠক করেছেন। এছাড়া আরও অনেক নেতা সেখানে নিয়মিত বৈঠক করে বাংলাদেশে ফেরার রূপরেখা তৈরি করছেন বলে জানা গেছে।
কলকাতার অভিজাত নিউটাউন এলাকায় অনেক বাংলাদেশি নেতা ফ্ল্যাট কিনেছেন কিংবা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন, পুর্তি ভেদা এবং শ্রাচি কমপ্লেক্সসহ বিলাসবহুল আবাসনগুলোতে তাদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, “এখানে প্রায়ই বিলাসবহুল গাড়িতে বাংলাদেশি নেতাদের আসতে দেখি। তাদের চলাফেরা খুবই গোপনীয়।” স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে তারা এসব বাসস্থানের ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নেতারা বেশিরভাগই অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশ করেছেন। তবে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার সময় পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথিপত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ভারতীয় প্রশাসনের নজর এড়াতে সাহায্য করছে।
কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, অসীম কুমার উকিল, অপু উকিলসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। এছাড়াও যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নেতাকর্মী এই অঞ্চলে অবস্থান করছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর তত্ত্বাবধানে এই নেতারা বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির কৌশল নিয়ে কাজ করছেন। নিউটাউনে তাদের বৈঠকের বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে এসেছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব নেতারা নিউটাউন ও এর আশপাশের এলাকায় মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন বিলাসবহুল বিনোদনকেন্দ্রে সময় কাটাচ্ছেন। ইকো পার্ক, অ্যাকোয়াটিকা পার্ক, এবং সিটি সেন্টার-২-এ তাদের নিয়মিত উপস্থিতি দেখা গেছে।
নিউটাউনের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি নেতাদের উপস্থিতি এখন বেশ চোখে পড়ার মতো। তারা বিলাসবহুল গাড়িতে চলাফেরা করেন এবং ব্যয়বহুল রেস্তোরাঁ ও শপিং সেন্টারে সময় কাটান।
কলকাতায় আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান এবং তাদের পরিকল্পিত কার্যক্রম বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। তাদের কার্যকলাপ নিয়ে ভারতীয় প্রশাসনের ভূমিকা এবং বাংলাদেশ সরকারের করণীয় এখন আলোচনার কেন্দ্রে। দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা এখন দেখার বিষয়।
Leave a Reply