জাবির ছাত্রী হল থেকে যুবক আটক, জুতাপেটা করে পুলিশে সোপর্দ!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের একটি কক্ষ থেকে এক নারী শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত এক যুবককে আটক করেছে ওই হলের শিক্ষার্থী ও হল কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে রাত পৌনে ২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

আটক ওই যুবকের নাম আশরাফুল ইসলাম পারভেজ ওরফে যাযাবর পারভেজ (৩১)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান তিন দিনব্যাপি হিম উৎসবে ঘুরতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ডাবলমুরিং থানায়।

হল কর্তৃপক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি ও হলের আবাসিক ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে ৫২ ব্যাচের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রী অর্পা খন্দকার চাঁদনীর সঙ্গে কপালে টিপ, প্লাজু প্যান্ট ও মুখে ঘোমটা দিয়ে হলের ভেতরে প্রবেশ করেন আশরাফুল ইসলাম পারভেজ। এসময় হলের তৃতীয় তলায় কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী তার পোশাক ও হাঁটার ধরন দেখে সন্দেহ করেন। পরে ওই শিক্ষার্থীরা হল সুপারকে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে বলেন।

পরে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে হল সুপারসহ ওই নারী শিক্ষার্থীর কক্ষে গিয়ে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম পারভেজসহ ওই কক্ষের বাসিন্দা নারী শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে দেখতে পান । এসময় শিক্ষার্থীরা ও হল কতৃপক্ষ আশরাফুল পারভেজ ও ওই নারী শিক্ষার্থীকে আটক করেন। আটকের পর আশরাফুল ইসলাম পারভেজকে শাড়ি ও টিপ পরিয়ে দেন হলের বিক্ষুব্ধ আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এসময় হল কতৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে রাত পৌণে ২ টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

আটকের পর ঘটনা স্বীকার করে আশরাফুল ইসলাম পারভেজ বলেন, আমরা দুইজন ভালো বন্ধু। ফেসবুকে আমাদের পরিচয়। আমাদের সাত বছরের বন্ধুত্ব। দুজনেই লালন ভক্ত। আমি হিম উৎসবে বেড়াতে এসেছি। হলে আসার সময় আমি কপালে টিপ দিয়ে মুখ ও শরীর চাদরে মুড়িয়ে হলে প্রবেশ করি।

অভিযুক্ত ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা উভয়েই ভালো বন্ধু। হিম উৎসবে সে এসেছিল। রাতে থাকার জায়গা না থাকায় তাকে আমি হলে নিয়ে এসেছি। আমরা কেউ আপত্তিকর অবস্থায় ছিলাম না।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের হল সুপার নাদিয়া সুলতানা বলেন, হলের মেয়েরা ওই ছাত্রীর কক্ষে কোনো পুরুষের উপস্থিতি বুঝতে পেরে আমাকে জানালে তাৎক্ষণিকভাবে আমি হলের একজন নারী কর্মচারীকে সাথে নিয়ে কক্ষে যাই। দরজা খোলার পর আমি তাকে খাটের উপরে বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই। তৎক্ষনাৎ আমি হল প্রাধ্যক্ষকে জানাই।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়েছি। অভিযুক্তদের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রীদের আবাসিক হলের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং হলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় জড়িতদের যথাযথ আইন ও নিয়মানুযায়ী শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাত পৌণে ২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, হল কর্তৃপক্ষের কাছে খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টরিয়াল টিমকে পাঠাই। এরপর আটক ছেলেকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হলের অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *