ঘন ঘন প্রস্রাব: কারণ, লক্ষণ ও সমাধান!

ঘন ঘন প্রসাব খুবই বিরক্তিকর, এজন্য একজন মানুষ অস্বস্তির মধ্যে পড়ে। সম্প্রতি ঘন ঘন প্রসাবের লক্ষণ, কারণ এবং কীভাবে এটি থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়, এ নিয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. সোহরাব হোসেন সৌরভ(ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ)।

ঘন ঘন প্রস্রাব একটি অস্বস্তিকর সমস্যা যা দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিভিন্ন সময়ে, দিনে বা রাতে হতে পারে এবং কখনো কখনো স্বাভাবিকের তুলনায় কম পরিমাণে প্রস্রাব হলেও বারবার করার তাগিদ অনুভূত হয়।

এ সমস্যাটি অনেক কারণে হতে পারে, যেমন মূত্রাশয় বা মূত্রনালির সংক্রমণ, পেশি বা স্নায়ুর সমস্যা, কিংবা বিশেষ কিছু ওষুধ বা পানীয়। এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন।

ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রধান কারণসমূহ

১. মূত্রনালির সংক্রমণ:
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মূত্রনালিতে প্রদাহ হলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা দেখা দেয়। এর সঙ্গে প্রস্রাবে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, দুর্গন্ধ বা রঙের পরিবর্তন হতে পারে।

২. ডায়াবেটিস:
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হওয়ার চেষ্টা করে, যা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।

৩. প্রস্টেটের সমস্যা (পুরুষদের ক্ষেত্রে):
প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে মূত্রাশয়ে চাপ সৃষ্টি হয়, বিশেষত রাতে প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়ে।

৪. অতিসক্রিয় মূত্রাশয়:
মূত্রাশয়ের পেশি অতিরিক্ত সংকুচিত হলে বারবার প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়।

৫. ডিহাইড্রেশন:
শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে কিডনি বেশি প্রস্রাব তৈরি করে।

৬. গর্ভাবস্থা:
জরায়ুর আকার বৃদ্ধি মূত্রাশয়ে চাপ সৃষ্টি করে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়।

৭. মূত্রাশয়ের পাথর:
পাথর থাকলে প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা রক্ত দেখা যেতে পারে।

৮. মানসিক চাপ:
উদ্বেগের কারণে সাময়িকভাবে প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়তে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাবের লক্ষণ

প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া।
প্রস্রাবের প্রবল তাগিদ।
মূত্রাশয় খালি না হওয়ার অনুভূতি।
প্রস্রাবের অস্বাভাবিক রঙ বা দুর্গন্ধ।

ঘরোয়া উপায়ে সমাধান

১. পানীয় নিয়ন্ত্রণ:
রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে অতিরিক্ত পানি বা চা-কফি এড়িয়ে চলুন।

২. খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন:
ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, টমেটো, চকোলেট বা মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত ওজন মূত্রাশয়ে চাপ বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।

৪. পেলভিক ব্যায়াম:
কেগেল এক্সারসাইজ এবং কুইক ফ্লিকসের মতো ব্যায়াম মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

৫. প্রাকৃতিক উপাদান:
কুমড়ার বীজ, এল-আরজিনিন, এবং কোহকি চা মূত্রাশয়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক।

ডাক্তারের পরামর্শ কখন নেবেন?

যদি ঘন ঘন প্রস্রাবের সঙ্গে ব্যথা, রক্ত, ওজন কমা বা ক্লান্তি দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এটি কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে এবং সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *