লস অ্যাঞ্জেলেসে নতুন দাবানল, ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত!

আবারও দাবানল দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে। অঙ্গরাজ্যটির উত্তরে নতুন এই দাবানলের আগুন ইতোমধ্যে ৮ হাজার একর (৩২ বর্গকিলোমিটার) এলাকা গ্রাস করেছে। প্রবল বাতাস ও শুকনো ঝোপঝাড়ের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২২ জানুয়ারি) এই দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ১৯ হাজারের বেশি মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলস থেকে প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) উত্তরে হিউজ ফায়ার নামে পরিচিত এই আগুন ইতিমধ্যেই অঞ্চলটির দমকল বাহিনীর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা ইতোমধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকায় জ্বলতে থাকা দুটি বড় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।

বুধবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন এই আগুন ইটন ফায়ারের অর্ধেকেরও বেশি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ইটন ফায়ার এই মাসের শুরুর দিকে লস অ্যাঞ্জেলস অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দুটি বড় দাবানলের একটি।

লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টির কাস্টেইক লেক এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে যে তারা ‘জীবনের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকির’ সম্মুখীন।

দেশটির দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বেশিরভাগ এলাকা এখনো শক্তিশালী, শুষ্ক বাতাসের কারণে চরম অগ্নি-ঝুঁকির জন্য রেড-ফ্ল্যাগ সতর্কতার অধীনে রয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, প্রায় ১৯ হাজার মানুষ বাধ্যতামূলক সরিয়ে নেয়ার আদেশের আওতায় রয়েছে, যা কাস্টেইক সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যার সমান। আরও ১৬ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য এবং মার্কিন বন পরিষেবা তাদের দমকল কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণে পাঠিয়েছে।

এদিকে অ্যাঞ্জেলেস ন্যাশনাল ফরেস্ট বিভাগ জানিয়েছে, তাদের ৭ লাখ একর (২ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার) বন সম্পূর্ণভাবে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

রেড-ফ্ল্যাগ সতর্কতার ফলে, ক্যালিফোর্নিয়া বন ও অগ্নি সুরক্ষা বিভাগ (ক্যাল ফায়ার) জানিয়েছে, ১ হাজার ১০০ দমকল কর্মী দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় গত ৯ মাস ধরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি, যা বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কিছু বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এই বৃষ্টি হলে দমকল কর্মীদের জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বস্তি বয়ে আনতে পারে।

এর আগে, ১০ দিনের বেশি সময় ধরে দাবানলে পুড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস। বাতাসের গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন বাসিন্দারা। কিন্তু ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। সেসময়, দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায় বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কয়েকদিন ধরে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন, যাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশিরাও।

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের মতো তীব্র গতির বাতাস ৭ জানুয়ারির দাবানলকে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন এলাকায়। ধ্বংসাত্মক এই দাবানলে হতাহত হয়েছেন বহু মানুষ। পুড়ে গেছে ১২ হাজারের বেশি বাড়িঘর ও স্থাপনা। সব হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন অন্তত পৌনে এক লাখ বাসিন্দা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় লস অ্যাঞ্জেলেসের বিস্তীর্ণ এলাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *