পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বিএনপিও অন্তবর্তীকালীন সরকার!

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যকে ঘিরে তোলপাড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি ও গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়ক এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীল ছাত্র প্রতিনিধিরা।

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবী মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিলো। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।

ছাত্র এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ই অগাস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। ৫ই অগাস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছ, তখন আমাদের আপোষকামী অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ক্যান্টনমেন্টে জনগণ কে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন (অনেকে ছাত্রদের কথাও বলেছেন সেখানে)।

আমরা ৩ই অগাস্ট থেকে বলে আসছি আমরা কোনো প্রকারের সেনা শাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নিবো না। আমাদেরকে বারবার ক্যান্টেন্টমেন্টে যেতে বলা হলেও আমরা যেতে অস্বীকার করি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে আলোচনা ও বার্গেনিং এর মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়তো সরকারে আসার প্রয়োজন হতো না। জাতীয় সরকার অনেকদিন স্থায়ী হবে এই বিবেচনায় বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজী হয় নাই।

কিন্তু অভ্যুত্থানের পরেই দেশে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল। অথচ বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলতেছে সামনের নির্বাচনের পরে।

ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর যেটা ১/১১ এর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েকদিন আগে মাইনাস টু এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে।

এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নিবে না। এবং আমি মনে করি এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।

আর এই সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সব পক্ষই নানান সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ই অগাস্ট এটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল যারা মূলত বিএনপির লোক। এরকমভাবে সরকারের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানান স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতায়ও মাথায় রাখতে হবে।

রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলা কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবী ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

কিন্তু এর মানে এই না যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমান ছাড় দিবো।

আওয়ামী লীগ বিষয়ে ভারতের প্রধান দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সম্ভব হয়েছে অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিষয়ে আমরা ঐক্য করতে পারি নাই এত হত্যা ও অপরাধের পরেও। হায় এই ‘জাতীয় ঐক্য’ লইয়া আমরা কি রাষ্ট্র বানাবো!

বাংলাদেশ কে দুর্বল করা সহজ কারণ বাংলাদেশকে সহজেই বিভাজিত করা যায়। এ দেশের বড় বড় লোকেরা অল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।

আমি মনে করিনা সমগ্র বিএনপি এই অবস্থান গ্রহণ করে। বরং বিএনপির কর্মী সমর্থকদের বড় অংশই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চায়।বিএনপির দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্বকে আহবান করব, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে না গিয়ে ছাত্র-জনতার সাথে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির পথ বেছে নিন।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামীলীগের নির্বাচন ইস্যু সহ অন্যান্য বিষয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন,
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির কোনো দ্বন্দ্ব না থাকার কথা বললেন অকপটে। অথচ তিনি ভুলে গেলেন, এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। গুম, খুন ও গণহত্যা করে বাংলাদেশকে অরাজকতার শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে। এতসব অন্যায়-অনাচার ও যুলুম-নিপীড়নের দায় এড়িয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাও করলেন না।

আবার তিনিই বললেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কিছু আসে যায় না। অথচ উনি ভুলে গেলেন, এই আওয়ামী লীগই বিগত তিনবারের জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে, এই আওয়ামী লীগের কারণেই তার দল বিএনপি বিগত সময়ের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলো বর্জন করতে বাধ্য হয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের কাঠামোগত পরিবর্তন করার সময় ও সুযোগ এলো অথচ বিএনপি দেশ পুনর্গঠনের এই সুযোগকে অবমূল্যায়ন করে হাজির হলো ১/১১ সরকারের ফর্মূলার আলাপ নিয়ে। ওদিকে অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশ সংস্কারের কাজে নিয়োজিত হলো তখন বিএনপি এসে বললো, এই সংস্কার করার ম্যান্ডেট বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই। অথচ বিএনপি এ কথা ভুলে গেলো, গণ-অভ্যুত্থানের ফলে গঠিত হওয়া সরকারের ম্যান্ডেট ষাট-সত্তরভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া রাজনৈতিক দলের চেয়েও বেশি।

আবার, দেশ ও দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে গণ-অভ্যুত্থানের পরে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত হলো জনসমক্ষে। ঠিক এ কারণেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ও জুলাই স্পিরিট ধারণকারী ছাত্র-জনতার সম্মিলনে যখন নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান হওয়ার আভাস পেলো ঠিক তখন বিএনপি সেটিকে চিহ্নিত করলো তাদের দলীয় স্বার্থের বিপক্ষে হুমকি হিসেবে। মানবজমিনের ভাষ্যমতে, ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ বানচাল করতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মাঝে উদ্বেগ ও শঙ্কা আদান-প্রদান হয়েছে। অর্থাৎ, বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় আওয়ামী লীগের অবাধ অনুপ্রবেশ করতে দিলেও ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান দেখতে চায় না।

সূত্র: https://youtu.be/0j7bAqRhvfg?si=XqSrUN5OlFQSAPRn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *